উইকেটে বল টার্ন করছিল। সাইফ চাপের মুখেও ভালো বোলিং করেন, সেটা ৫০তম ওভারে প্রমাণ করেছেন। আমি মনে করি, সাইফকে আরও ৩-৪ ওভার বেশি বোলিং করানো উচিত ছিল। কেন করাননি মিরাজ, সেটা আমার প্রশ্ন
সুপার ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসানকে দেখে অবাক হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার আকিল হোসেন। ক্যারিবীয় স্পিনার বিস্মিত হয়েছেন ছন্দে থাকা রিশাদ হোসেনকে ব্যাটিংয়ে না দেখে। দুই ম্যাচে তার স্ট্রাইকরেট ২০০-এর ওপরে, দুই ওয়ানডেতে ছক্কা মেরেছেন ৫টি, সুপার ওভারে তাকে ব্যাটিং না করানোর কোনো কারণ জানায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। এমন কী অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজও কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সুপার ওভারের ৬ বলে যেখানে টার্গেট ১১ রান, সেখানে রিশাদের মতো আগ্রাসী ব্যাটার না পাঠিয়ে সৌম্যকে পাঠিয়েছেন মিরাজ। অথচ সৌম্য দীর্ঘদিন জাতীয় দলে ছিলেন না। আবার বাঁ-হাতি সৌম্যর আউটের পর নাজমুল শান্তকে পাঠান, যিনি টি-২০ ফরম্যাটের ক্রিকেটে সুযোগই পান না, সেখানে সুপার সিক্সে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। অধিনায়ক মিরাজের এমন হটকারী সিদ্ধান্তে সুপার ওভারে গড়ানো ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরে যায়। এমন কষ্টকর হারের পর ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন মিরাজের নেতৃত্বগুণ নিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, সুপার ওভারে রিশাদকে ব্যাটিংয়ে না দেখে, ‘রিশাদ যে ফর্মে রয়েছেন, চোখ বন্ধ করে তাকে সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে পাঠানো উচিত ছিল। অথচ তাকে না পাঠানোয় আমি খুব অবাক হয়েছি। এ সময়ে অধিনায়ককে শক্ত অবস্থান নিতে হয়। ম্যাচ রিডিং করতে হয়। পরিস্থিতি বুঝতে হয়। আমার মনে হয়েছে, মিরাজ ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে পারেননি। বুঝলে সাইফের সঙ্গে রিশাদকে অবশ্যই ব্যাটিংয়ে পাঠাতেন। এরপর সোহান (নুরুল হাসান সোহান) কিংবা অঙ্কনকে (মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন) পাঠাতে পারতেন। দুজনেই সুইপ, রিভার্স সুইপ ভালো খেলেন।’
নাজমুল হোসেন শান্তকে হঠাৎ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় বিসিবি। শান্তের পরিবর্তে তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের মনোনয়ন দেয়। গত জুনে মিরাজের হাতে এক বছরের জন্য ওয়ানডের দায়িত্ব তুলে দেয় ক্রিকেট বোর্ড। দায়িত্ব পাওয়ার পর মিরাজ নেতৃত্ব দিয়েছেন ১২ ম্যাচে। জয় পেয়েছেন শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সিরিজ হেরেছেন আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। নিজেদের ৪৫৪ ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম ম্যাচ ‘টাই’ হয়েছে বাংলাদেশের। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ব্যাটিংয়ে ২১৩ রান করেছিল মিরাজ বাহিনী। শেষ বলে সোহানের ক্যাচ মিসে ম্যাচ ‘টাই’ হয়। এরপর গড়ায় সুপার ওভারে।
ম্যাচ এক সময় পুরোপুরি হেলেছিল টাইগারদের দিকে। ১৮ বলে দরকার ছিল ২৫ রান। ৪৮তম ওভারের শেষ বলটি ফ্লাইটেড করেন মিরাজ। সুইপে ছক্কা মেরে বল ও রানের ব্যবধান কমান আকিল। অথচ বলটি ফ্ল্যাট করতে পারতেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মিরাজের ফ্লাইটেড বল করার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি সাবেক অধিনায়ক সুজন, ‘৪৮ নম্বর ওভারে একটু জোরে বল করা উচিত ছিল মিরাজের। শেষ বলটি তিনি যেভাবে ফ্লাইটেড করেন, সেটা আমাকে অবাক করেছে। হয়তো উইকেটের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু তার উচিত ছিল উইকেটের জন্য না গিয়ে রান আটকানো।’ সুজন শুধু মিরাজের ওই ফ্লাইটেড বল নিয়েই প্রশ্ন তোলেননি, সাইফকে আরও বেশি ওভার বোলিং না করানোয় অবাক হয়েছেন, ‘উইকেটে বল টার্ন করছিল। সাইফ চাপের মুখেও ভালো বোলিং করেন, সেটা ৫০তম ওভারে প্রমাণ করেছেন। আমি মনে করি, সাইফকে আরও ৩-৪ ওভার বেশি বোলিং করানো উচিত ছিল। কেন করাননি মিরাজ, সেটা আমার প্রশ্ন।’ অনেকেই বলছেন, মিরাজ এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সমালোচকদের মতে, তিনি চাননি সাইফ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও সাফল্য পান।
মিরপুরের উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরো ৫০ ওভার বোলিং করিয়েছে ৫ স্পিনারকে দিয়ে। বাংলাদেশের স্পিনাররাও বল করেছেন ৪২ ওভার। সব মিলিয়ে ৯২ ওভার বোলিং করেছেন স্পিনাররা। উইকেটে বল লাটিমের মতো ঘুরেছে, তখন টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত মেনে সুপার ওভারে একজন স্পিনারকে বোলিং না করিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানকে বোলিং করানোর কোনো কারণ খুঁজে পাননি সুজন, ‘উইকেটে বল টার্ন করছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেখানে সুপার ওভারে স্পিনার দিয়ে বোলিং করিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ কেন স্পিনার ব্যবহার করেনি, আমার কাছে বিষয়টি অবাক লেগেছে।’
আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। প্রথম ম্যাচ মিরাজ বাহিনী জিতেছ ৭৪ রানে দ্বিতীয়টি ‘টাই’। সে হিসেবে সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে। আজ জিতলে সিরিজ নিশ্চিত হবে মিরাজদের। হারলেও সিরিজ হার এড়াবে।