নারী উদ্যোক্তা সাবেকুন্নাহার মিতু। তাঁর হস্তশিল্প কারখানায় পাট, হোগলপাতা, ছন ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের পরিবেশবান্ধব রপ্তানি পণ্য। এখন তাঁর দুটি কারখানায় ২০০ নারী এবং চুক্তি ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রামে কাজ করছেন আরও ৩০০ নারী শ্রমিক
সাবেকুন্নাহার মিতু। অজোপাড়া গাঁয়ের এ নারীর হস্তশিল্প কারখানায় পাট, হোগলপাতা, ছন ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের পরিবেশবান্ধব রপ্তানিকারক পণ্য। এসব পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সম্মাননা। তাঁর পথচলার শুরুটা সহজ ছিল না। ফরিদপুর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার অদূরে মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের সাবেকুন্নাহার মিতু পড়ালেখা শেষ করে বেকার ছিলেন। ২০২০ সালে চলছিল করোনা মহামারি। ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছিলেন। আর সেই সময় নিজে স্বাবলম্বী হতে এবং এলাকার বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান তৈরির চিন্তা থেকেই ‘লাম ক্রিয়েশন’ নামে একটি হস্তশিল্প কারখানা গড়ে তোলেন। নিজের গ্রাম শ্রীপুর সংলগ্ন ব্যসদী বাজারে নিজের কাছে জমানো কিছু টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ১২টি মেশিন কিনে ১৫ নারী শ্রমিক নিয়ে শুরু করেন হস্তশিল্পের কাজ। এখন সাবেকুন্নাহার মিতুর দুটি কারখানায় ২০০ শ্রমিক কাজ করছেন। আর চুক্তি ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে কাজ করছেন আরও ৩০০ নারী শ্রমিক। তাঁর রাজবাড়ী জেলা সদরের কোলারহাটে একই নামে আরও একটি কারখানা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে একদিন পরপর এক ট্রাক পণ্য দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়। ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব পণ্য বায়ারদের মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। প্রতি মাসে ‘লাম ক্রিয়েশন’ কারখানা থেকে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভালো প্রভাব পড়ছে এসব শিল্প গড়ে ওঠায়। সরেজমিন কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, পাট, হোগলা পাতা, কচুরিপানা ও ছন দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ, ম্যাট, পাপস, পেট হাউস, ফাইল বক্স, বাস্কেট, ফুলের টব, বাটি, ঝুড়ি, টিফিন বক্স, টিস্যু বক্সসহ অর্ধশতাধিক বাহারি পণ্য। এসব পণ্য তৈরিতে নারীদের সঙ্গে পুরুষ শ্রমিকরাও কাজ করছেন। কেউ পণ্য তৈরি করছেন, কেউ ফিনিশিং, চেকিং ও সুতা ববিনে ভরছেন। আবার কেউ তৈরি পণ্য সাজিয়ে রাখছেন। পরে এগুলো রপ্তানির জন্য যাচাই-বাছাই করছেন অনেকেই। এসব পণ্যের কাঁচামাল হোগলা পাতা নোয়াখালী ও ভোলা থেকে সংগ্রহ করা হয়। আর ঢাকার সদরঘাট থেকে সুতা আনা হয়। এ কারখানায় ৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করা হয়। সাবেকুন্নাহার মিতু বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করে করোনা মহামারির মধ্যে যখন হতাশায় ছিলাম। তখন নিজের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ও কাছে থাকা কিছু জমানো টাকা দিয়ে স্বল্প পরিসরে ইউটিউব দেখে যাত্রা শুরু করি। এখানে পাট, হোগলাপাতা, সুইং সুতা ও কচুরিপানা দিয়ে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারোপযোগী বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রতি মাসে আমার সব খরচ বাদে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। কারখানাটি করে আমিও স্বাবলম্বী হয়েছি এবং এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি।’