উত্তর কুয়েতের সুবিয়া এলাকার ঐতিহাসিক বাহরা–১ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে মিলেছে যুগান্তকারী আবিষ্কার। জাতীয় সংস্কৃতি, শিল্প ও পত্র পরিষদ (এনসিসিএএল) সোমবার জানায়—এ স্থানে পাওয়া গেছে ৭,৭০০ বছরেরও বেশি পুরনো ২০টির বেশি প্রাচীন ভাটি এবং বহু দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন, যা আরব উপদ্বীপের প্রাচীন জীবনযাত্রার ওপর নতুন আলোকপাত করছে।
সাম্প্রতিক খননে বেরিয়ে এসেছে ডানাওয়ালা পেঁচার অর্ধেক মডেল, স্থানীয়ভাবে জন্মানো প্রায় ৭,৫০০ বছর পুরনো বার্লির অবশেষ, ভাঙা মৃৎপাত্র, ছোট আকৃতির মানবমাথার মডেল, ক্ষুদ্র মূর্তি, প্রাচীন জাহাজের মডেল এবং খাদ্য প্রস্তুতির মাটির পাত্রসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সামগ্রী। এসব আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয়—বাহরা–১ একসময় অত্যন্ত সংগঠিত ও সমৃদ্ধ বসতি ছিল।
এনসিসিএএল-এর পুরাকীর্তি ও জাদুঘর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সহকারী মহাসচিব মোহাম্মদ বিন রেধা জানান, বাহরা–১ আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম পরিচিত বসতি, যার সময়কাল প্রায় ৫৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের উবাইদ সংস্কৃতি। তার মতে, সাম্প্রতিক নিদর্শনগুলো অঞ্চলটির প্রাচীন মানুষের জীবনধারা ও সামাজিক উন্নয়নের নানান দিক বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ মৌসুমে পোলিশ প্রত্নতাত্ত্বিক দলের গবেষণা মূলত কেন্দ্রীভূত ছিল দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কাঠামো পুনর্গঠন, অলঙ্কার উৎপাদন, পরীক্ষাগার বিশ্লেষণ এবং গ্রাউন্ড–পেনিট্রেটিং রাডার (GPR) জরিপে। রাডার জরিপে ভবিষ্যতের খননকাজে সহায়ক বহু সমাহিত সাংস্কৃতিক কাঠামো শনাক্ত হয়েছে।
কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হাসান আশকানানি বলেন, “সুবিয়া অঞ্চলে মানুষের প্রাথমিক বসতি স্থাপন ও তাদের সামাজিক বিকাশ সম্পর্কে এই নতুন তথ্যগুলো আমাদের জ্ঞানকে আরও বিস্তৃত করবে।” তিনি বলেন, আগের এক মৌসুমে খোলস থেকে অলঙ্কার তৈরির কর্মশালার সন্ধানও মিলেছিল।
পোলিশ দলের উপ-পরিচালক ড. অগ্নিয়েস্কা বিয়েনকোভস্কা জানান, সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো খাদ্য প্রস্তুতি, স্থানীয় মৃৎশিল্প এবং জ্বালানি হিসেবে বিটুমিন ব্যবহারের প্রমাণ দেয়। আর অধ্যাপক আনা স্মোগোরজেউস্কার ভাষায়, সাইটে পাওয়া মৃৎশিল্পের নিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট কর্মশালাগুলো সাম্প্রতিক বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার।
২০০৯ সাল থেকে বাহরা–১ সাইটে এনসিসিএএল এবং ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলিশ সেন্টার ফর মেডিটেরেনিয়ান আর্কিওলজি যৌথভাবে গবেষণা পরিচালনা করছে। বর্তমান অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক পিওটর বিয়েলিনস্কি এবং তার উপ-পরিচালক ড. বিয়েনকোভস্কা।
গবেষকদের মতে, এসব নতুন আবিষ্কার কুয়েতের ইতিহাস, মানববসতির বিবর্তন এবং প্রাচীন সভ্যতার শিল্প–সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন অধ্যায় উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল