বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে নতুন ইতিহাস গড়ল গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি তাদের উদ্ভাবিত করোনা প্রতিরোধী রিবোনিউক্লিক অ্যাসিড (mRNA) ভিত্তিক টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব অধিদপ্তর থেকে পেটেন্ট লাভ করেছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে এটাই প্রথম মেধাস্বত্ব অর্জনের ঘটনা।
আজ রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ।
টিকা উদ্ভাবনের যাত্রা
গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ২০১৫ সাল থেকে জিনভিত্তিক চিকিৎসা ও জটিল রোগের আধুনিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। করোনা মহামারির সময় ড. কাকন নাগ, ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়।
২০২০ সালে টিকাটির জেনেটিক সংকেত যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (NCBI)-এ প্রকাশিত হয়। একই বছর যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী Nature এবং যুক্তরাষ্ট্রের Elsevier প্রকাশিত Vaccine সাময়িকীতে বঙ্গভ্যাক্স নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২০ সালেই এটিকে কোভিড টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
বিশ্বের একমাত্র এক ডোজ এমআরএনএ টিকা
গ্লোব বায়োটেকের দাবি, বঙ্গভ্যাক্স হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র এক ডোজ কার্যকর এমআরএনএ টিকা, যা করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়। এতে ব্যবহৃত হয়েছে নিজস্ব উদ্ভাবিত ন্যানোটেকনোলজি, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ডিএনএ, সাবইউনিট, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস কিংবা পুনঃসংশ্লেষিত ভাইরাসভিত্তিক টিকাও তৈরি করা যাবে।
পেটেন্টের গুরুত্ব
প্রযুক্তিটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করছে গ্লোব বায়োটেক। একই সঙ্গে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগও তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রাণীতে সফল পরীক্ষা
প্রাণীতে (বানরের ওপর) সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে বঙ্গভ্যাক্স, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। ইতোমধ্যে এটি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (BMRC) এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (DGDA) থেকে মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর অনুমোদন পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্বে মোট ৩০টি উদ্ভাবনী দাবি (ইনভেনশন ক্লেইম) অনুমোদন পেয়েছে।
ড. কাকন নাগ বলেন, “এটি শুধু একটি টিকার মেধাস্বত্ব নয়, এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন অপেক্ষা, টিকাটি চূড়ান্ত পরীক্ষার পর সাধারণ মানুষের ব্যবহারে কবে আসবে।”
গ্লোব বায়োটেকের মতে, এই প্রযুক্তি শুধু করোনা নয়, ভবিষ্যতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ, রক্তের অসুখসহ জটিল রোগের আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরির পথও খুলে দেবে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক