বিএনপির চেয়ারপারসন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেছেন, আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞভিত্তিক পরামর্শ সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মাহাদী আমিন বলেন, যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের ওপর দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় কিংবা রাজনৈতিকভাবে আমরা পালন করতে পারিনি। গুমের শিকার পরিবারকে সহায়তা করতে কত টাকার প্রয়োজন? রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে প্রত্যেকটা পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। এটা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। এ সময় তিনি বলেন, আমি যেহেতু বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব করছি, আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা রয়েছে। আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসলে তারেক রহমান কথা বলেছেন, সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াবেন। এটা আমাদের অন্যতম প্রধান দায়বদ্ধতা।
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে শারীরিকভাবে অনেক কিছু পাশাপাশি তারা যে মানসিকভাবেও অত্যাচারিত, এটা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকার করতে হবে। বারবার কি আমরা সেমিনার করব? সেটা যাতে না হয়। বাস্তবতার আলোকে কার্যকর কিছু ব্যবস্থা যাতে গ্রহণ করা যায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য ভুক্তভোগীদের নিয়ে খেলা না করে, এটা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। সত্যিকার অর্থে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি না আসে, তাহলে পরিবর্তনগুলো হবে না।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, আমরা তা করতে পারছি না। অবশ্যই বিচার দরকার, কিন্তু দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যেন নতুন করে অবিচার না হয়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তা শুধু ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক না হয়ে প্রয়োজনভিত্তিক এবং এটা বণ্টনের একটি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতিসংঘ বাংলাদেশের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য বিচার ছাড়াও আরও অনেক কিছু করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কমিশন গঠন নিয়ে ঐক্যমত্য হতে পারে। তারা যে সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলো সমাধান হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমি আমার জায়গা থেকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানে এক ডজনেরও বেশি গুমের শিকার ভুক্তভোগী তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ভুক্তভোগীরা চাকরি কিংবা ব্যবসা কোনো কিছু করতে পারছে না। অবিলম্বে গুম কমিশন গঠন করে ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। সরকারের ট্যাক্সের টাকার প্রয়োজন হবে না, সারা দুনিয়া এখানে সহায়তা করবে। এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকার এই ভুক্তভোগী কয়টা পরিবারকে সহায়তা করতে পারবে না?
আরেক ভুক্তভোগী কর্নেল হাসিনুর বলেন, বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন, শেখ হাসিনা তা করেছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের জঙ্গি মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি কমিশনের মাধ্যমে এই জঙ্গি নাটকের সমাধান করা উচিত।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু তার বক্তব্যে তার ওপর নির্যাতনের কাহিনি তুলে ধরেন। দোষীদের বিচার হওয়ার সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বক্তারা বলেন, বিগত ১৬ বছর অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, কিন্তু তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা আমাদের হাতে নেই। গুমের শিকার পরিবারগুলো আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছে, তারা মানসিক ট্রমার ভেতর দিনাতিপাত করছে। অবিলম্বে গুম কমিশন গঠনসহ ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য আর্থিক তহবিল গঠন করতে হবে। গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের মনস্তাত্ত্বিক পুনর্বাসনও জরুরি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল