কাশ্মীরের বান্দীপোরার উলার হ্রদের ধারে দাঁড়িয়ে আছেন আবদুল রশিদ দার। বিস্ময় মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে আছেন হ্রদে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি গোলাপি পদ্মের দিকে। যেন পানি নয়, গোলাপি স্বপ্নের সমুদ্র! মাঝেমধ্যে ঝুঁকে ছুঁয়ে দেখছেন এক একটি পদ্মপাপড়ি। কেমন যেন অনিশ্চয়তায় ঘেরা আনন্দ—এও কি সম্ভব? এই বয়সে এসে আবারও কি চোখের সামনে দেখতে পাবেন শৈশবের সেই দৃশ্য?
আবদুলের চোখে ফিরে আসে পুরনো দিন। তাঁর বাবা ছিলেন পেশায় পদ্মচাষি। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে নৌকায় করে হ্রদের বুকে গিয়ে পদ্মকাণ্ড সংগ্রহ করতেন। তখন উলার হ্রদে ছিল অগণিত পদ্ম। আর আজ, প্রায় ৩০ বছর পর আবার সেই স্মৃতি যেন জেগে উঠেছে হ্রদের জলে।
১৯৯২ সালের ভয়াবহ বন্যা সব কিছু বদলে দিয়েছিল। উলার হ্রদ ঢেকে যায় পুরু পলিতে। চিরতরে হারিয়ে যায় পদ্মের অস্তিত্ব। স্থানীয়দের অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন—আর কোনও দিন হয়তো পদ্ম ফোটার সাক্ষী থাকবে না উলার জল।
কিন্তু গল্প বদলাতে থাকে ২০২০ সাল থেকে। উলার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হ্রদ পুনরুদ্ধারে এক বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়। পলি অপসারণ শুরু হয় লক্ষ্যমাত্রা ধরে। কর্তৃপক্ষের দাবি, হ্রদের তলায় চাপা পড়ে থাকা পদ্মের বীজ আবার আলো-বাতাস পেয়ে প্রাণ পায়। ২০২৪ সালে দেখা যায় প্রথম কয়েকটি পদ্মফুল।
প্রথম বছর ফুল না কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সংরক্ষণের খাতিরে। তবে ২০২৫-এ দেখা যাচ্ছে, পদ্মের বিস্তৃতি আরও অনেক বড় পরিসরে হয়েছে। ফলে আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে বান্দীপোরার ঐতিহ্যবাহী পেশা—নাদরু সংগ্রহ। স্থানীয় ভাষায় ‘নাদরু’ বলতে বোঝায় পদ্মকাণ্ড, যা দিয়ে বানানো হয় কাশ্মীরি রান্নার সুস্বাদু পদ ‘নাদরু ইয়াখনি’।
হ্রদের ধারে থাকা লঙ্ক্রেশিপোরা গ্রামের মানুষজন আজ নতুন আশায় বুক বাঁধছেন। জীবিকা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনায় আনন্দিত তাঁরা। কেউ কেউ বলছেন, বেকারত্বের হাহাকারে এই পদ্মই হতে পারে আশার আলো।
উলারের জোনাল অফিসার মুদাসির আহমেদ বলেন, আমরা যেখানে পলি সরাতে পেরেছি, সেখানেই আবার পদ্ম ফুটছে। এই পদ্মের বীজ বহু বছর ধরে মাটির তলায় চাপা ছিল, এখন আবার তারা ফিরে এসেছে।
এখনও পর্যন্ত ৭৯ লক্ষ ঘনমিটার পলি সরানো হয়েছে হ্রদ থেকে। তবে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, কাজ এখনও শেষ হয়নি। উলারের পুরো বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে সময় লাগবে আরও কিছু বছর।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল