জামিন নিয়ে সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের দেওয়া বক্তব্যকে স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। আইন উপদেষ্টার বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল উল্লেখ করে তার পদত্যাগও দাবি করেছেন তারা। বলেছেন তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শামসুল হক হলে গতকাল দুপুরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আইনজীবীবৃন্দ ব্যানারে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ আহমেদ বাদলের সভাপতিত্বে ও এম আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন আইনজীবী হাসান তারেক চৌধুরী, সৈয়দ মামুন মাহবুব, সুরাইয়া বেগম, এ বি এম রফিকুল রাজা, এম খালেদ আহমেদ, কে এম জাবের, হুমায়ুন কবির, সজীব মাহমুদ, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, আবদুল কুদ্দুস বাদল, ইয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আজকে উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে কিছু বিষয়ে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ এক দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মামলায় জামিন দিয়েছেন। জামিন তিনি দিতেই পারেন। কিন্তু চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব? এটা কি আসলে বিচারিক বিবেচনা ছিল কি না? এরকম আরও কিছু কিছু প্রসঙ্গ উঠেছে। তার এ বক্তব্যের পর পরই আইনজীবীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
আইনজীবী হাসান তারেক চৌধুরী বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা স্বাধীন কি না? গণ অভ্যুত্থানের দাবি ছিল স্বাধীন বিচার বিভাগ। আজ স্বাধীন বিচার বিভাগ আক্রান্ত। বিচার বিভাগের ওপর যখন আঘাত আসবে, তখন আমরা ঐক্যবদ্ধ।
সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, উচ্চ আদালতের বিচার কাজের ওপর নির্বাহী বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেছেন। এরকম একটি আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচার বিভাগ রং হেডেড আখ্যা দিয়েছিল। আজ সভার সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আইন উপদেষ্টা বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে, আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন নিয়ে কোনো দ্বিমত পোষণ করা যাবে না। প্রধান বিচারপতি এ ইস্যুতে (বিষয়টি স্পষ্ট করে) বিবৃতি দিয়েছেন, এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আপনার সঙ্গে আছি। কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল দেখবে। নদী আইনের শিক্ষক উপদেষ্টা হয়েছেন, ১৯৪৭ সাল থেকে এমন ঘটনা এ দেশে ঘটেনি। তিনি আইন উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, আপনি সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বসেন, আমাদের সঙ্গে বসেন, চা খান। বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। এতে আপনি ছোট হবেন না। গ্রন্থগত বিদ্যা প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে না উল্লেখ করে একজন আইনজীবী বলেন, আসিফ নজরুল আইনের শিক্ষক, তিনি হাই কোর্ট সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখেন না। ধারণা রাখলে এরকম বক্তব্য দিতেন না। আজ পর্যন্ত তিনি অসৌজন্যমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। হাই কোর্ট স্বাধীন, বিচারকরা কী আদেশ দিয়েছেন, সেটা তাদের বিষয়। আশা করি সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে আদালত অবমমাননার মামলা করবে, নইলে আমরাই করব।
এ বি এম রফিকুল হক রাজা বলেন, আসিফ নজরুল যে বক্তব্য রেখেছেন, তা স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ; আমরা তা মেনে নেব না।
সভাপতির বক্তব্যে শাহ আহমেদ বাদল বলেন, আজ আইনজীবীরা জেগে উঠেছে। আইন উপদেষ্টার বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। এজন্য ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট সুয়োমটো রুল না দিলে ২ নভেম্বর থেকে আমরা কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করব। তার পদত্যাগের দাবি করা হবে।