উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়েছে। হিমালয়ান সমতল অঞ্চল খ্যাত এই জেলায় প্রতিবছর অক্টোবর থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। সারা বছর ভ্রমণপিপাসুরা এই জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আনন্দ উদযাপন করলেও অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। পর্যটকদের জন্য জেলা প্রশাসনও নিয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
পঞ্চগড়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানের নাম তেঁতুলিয়া। এই এলাকার সহজ জীবনাচরন আর সবুজ প্রকৃতির মোহনীয় রুপ ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত উপভোগ্য। তাই বছরের সবসময়ই দেশ বিদেশের হাজারো পর্যটক ছুটে আসে এই এলাকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। নানা স্পট ঘুরে তারা মুগ্ধতা নিয়েই বাড়ি ফিরছেন। এদিকে পর্যটকদের আনাগোনায় ব্যবসাপাতি সহ কর্মসংস্থানেও চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
সমতল ভূমিতে বিস্তির্ণ সবুজ চা বাগান, হাটু পানির ছোট বড় নদী আর ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা গ্রামগুলোর আঁকা বাঁকা মেঠো পথে বর্তমানে হাজারো পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভোরের চায়ে চুমুক দিতে দিতে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ সৌন্দর্য্যও উপভোগ করছেন তারা। সারাদিন ঘোরা ফেরা আর আনন্দ। স্থানীয়দের আতিথিয়তা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করে পর্যটকরাও বিপুল আনন্দিত। তারা বলছেন, এমন এলাকায় সবার একবার আসা উচিৎ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে আসছেন তারা। ভোর বেলা মহানন্দা নদীর পার থেকেই সবচেয়ে সুন্দর দেখা যায় অনন্য হিমালয় পর্বতমালা। পুরান বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে মহানন্দা পার্ক। এখান থেকে ভারতীয় চা বাগান, ব্রিজ, নদী ও ভারতের গ্রাম আকর্ষণ করে পর্যটকদের। সবজি গ্রাম নামে খ্যাত দর্জিপাড়ায় যাচ্ছেন গ্রাম আর সমতলের চা বাগান দেখতে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। জেলার মিড়গড় এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে জেলা প্রশাসন ইকো পার্ক। এই পার্কেও পর্যটকেরা আসছেন ঘুরছেন আর সময় কাটাচ্ছেন।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দুর্গনগরী ভীতরগড়, মহারাজার দিঘী, বারো আউলিয়ার মাজার, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, গোলকধাম মন্দির, রক্স মিউজিয়ামে যাচ্ছেন পর্যটকেরা। পর্যটকদের আপ্যায়নে এগিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের কর্মসংস্থান। স্থানীয় হোটেলগুলোতে স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। অনেকে বাড়িতেই খুলে বসেছেন আবাসিক এবং খাবার হোটেল।
বাংলা হোটেলের স্বত্বাধিকারী আজিজুল হক জানান, এখানকার বেশ কয়েকটি নদী যেমন মহানন্দা, বেরং, ডাহুক, ভেরসা নদীতে নানা ধরেনের মিষ্টি পানির মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ সংগ্রহ করে পর্যটকদের জন্য রান্না করি। এছাড়া পর্যটকরা যদি আরও স্থানীয় খাবার খেতে চায় তাও সরবরাহ করি।
পঞ্চগড় ট্যুরিজম ডেভলেপমেন্ট অ্যাসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান শাকিল জানান, পঞ্চগড়ে বর্তমানে বিপুল পরিমাণে পর্যটক ভ্রমণ করছেন। আবাসিক সংকটের কারণে অনেক পর্যটককে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগ আছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। পঞ্চগড়কে পর্যটন জেলা ঘোষণা করে আরও কিছু উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
পর্যটকদের আপ্যায়নে এগিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের কর্মসংস্থান। স্থানীয় হোটেলগুলোতে স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। অনেকে বাড়িতেই খুলে বসেছেন আবাসিক এবং খাবার হোটেল।
পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ আর আনন্দ উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী জানান, পঞ্চগড়ে ট্যুরিস্টরা এসে যেন নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারেন এ জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পঞ্চগড়ে স্বল্প সময়ে একটি ইকো পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রীক ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা হয়েছে। একটি অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে সহজেই ভ্রমণ পিাপসুরা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন যায়গায় ভ্রমণ করতে পারবেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন