ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার। গতকাল সন্ধ্যায় এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ডাকসু নির্বাচনে জিএস নির্বাচিত হলে করণীয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। আবু বাকের মজুমদার বলেন, জুলাইয়ের পূর্ববর্তী সময়েও আমরা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছি। জুলাইয়ের পূর্ববর্তী সময়ে আমরা গণতান্ত্রিক সামাজিক বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এবং সেই কমিউনিটিকেও আমরা প্রাথমিকভাবে জুলাই আন্দোলনে কাজে লাগাতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা হামলা-মামলা গুমের শিকার পর্যন্ত হয়েছি। কোথাও কোনো আপস করিনি। জুলাই পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই মিলেমিশে ক্যাম্পাসে কাজ করেছি। শিক্ষার্থীদের যত সমস্যা আমাদের চোখে পড়েছে তা সমাধানের চেষ্টা করেছি। ক্লিন ইমেজের রাজনীতি করা এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষে রাজনীতি করা আমরা জুলাইয়ের আগেও করেছি এবং পরেও ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ক্যাম্পাসের আবাসন সংকট। এ সমস্যা নিয়ে কোনো সময়ই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের যে জগন্নাথ হলের রবীন্দ্র ভবন, বঙ্গবন্ধু টাওয়ার আছে এ রকম চার-পাঁচটা ভবনের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন সম্ভব।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের খাদ্য সমস্যা নিয়ে আমাদের একটা প্রস্তাবনা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে আমরা ফুড পয়েন্ট তৈরি করব। সবখানে একই ধরনের ফুড পয়েন্ট হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের কার্ড দিয়েই সেখানে এক্সেস করতে পারবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এটা করা যেতে পারে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং ক্যারিয়ার সম্পাদক পদে যারা প্রার্থী আছেন তাদের এতটুকু সক্ষমতা আছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে মাসে ৫০ হাজার টাকা কীভাবে আয় করতে হয় সে প্রশিক্ষণ আমরা দিতে পারব। অনেকে শিক্ষার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বা অন্য মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করবে কিন্তু আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের যদি আমরা স্কিল ডেভেলপমেন্টের আওতায় আনতে পারি এবং যারা অসচ্ছল শিক্ষার্থী আছেন তাদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো পেশায় নিযুক্ত করতে পারি তাহলে এর মাধ্যমে তারা মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা অনায়াসে আয় করতে পারবে।
আমাদের প্রস্তাবনার মাঝে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সংস্কার। যেখানে শিক্ষক নিয়োগ সুষ্ঠু হওয়া, টিচার্স ইভাল্যুয়েশন নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। এ ছাড়া একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ল্যাব, রিসার্চ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যা যা ফ্যাসিলিটি ও এক্সেস দরকার হয় তা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।
পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেব। আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা তাদের হলে প্রবেশ করতে পারে না আবার এক হলের নারী শিক্ষার্থীরা অন্য ছাত্রী হলে প্রবেশ করতে পারে না। এ জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমাদের ইশতেহার আসবে।
আমাদের অন্যতম ইশতেহার হচ্ছে, আবাসিক হলগুলোতে ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া। ঢাবিতে স্টারলিংক সেবা চালু করা হবে এবং হিসাব করে দেখা গেছে এর জন্য শিক্ষার্থীর মাথাপিছু মাত্র ৪০ টাকা খরচ হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা স্পন্সরশিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা সম্ভব।