‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ কথাটির প্রমাণ দেখা গেল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দগ্ধ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো মানুষের মাঝেও। বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ কোমলমতি শিশুদের রক্তের প্রয়োজন মেটাতে রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
সোমবার ওই দুর্ঘটনার দিনই শুরু হয় রক্তদানে মানুষের ঢল। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যাংকার, চাকরিজীবী, এমনকি সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধরাও লাইনে দাঁড়ান কাগজে লেখা ‘রক্ত লাগবে’, ‘রক্ত নিন’ পোস্টার হাতে। গতকালও সে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল মানবতা। অচেনা শিশুদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সেসব মানুষের মুখেই লেখা ছিল মানবতা এখনো বেঁচে আছে। সোমবার থেকেই হেল্পডেস্ক খুলে অনেকে রক্তদাতাদের নাম, ফোন নম্বর ও রক্তের গ্রুপ লিপিবদ্ধ করেন। চাহিদা অনুযায়ী সেসব রক্তই সরবরাহ করা হচ্ছে হাসপাতালে। ৭০ বছর বয়সি সারাফাত আলী এসেছিলেন গ্রিন রোড থেকে। পরিবারের কাউকে না জানিয়েই রক্ত দিতে লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু প্রচ গরমে অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। স্বেচ্ছাসেবীরা দৌড়ে গিয়ে তাঁকে সেবা দেন, হুঁশ ফেরার পর অ্যাম্বুলেন্সে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মুগদাপাড়া থেকে তামান্না শারমিন ও তাঁর চার বন্ধু এসে দাঁড়িয়েছিলেন রক্তদাতার লাইনে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তামান্না বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই রাতে ঘুমাতে পারিনি। টিভিতে দেখে জানলাম রক্ত দরকার। এসে দেখি এখন রক্ত লাগছে না, তবে পরে লাগতে পারে তাই নাম দিয়ে গেলাম।’
জাতীয় বার্ন ইউনিটের সামনে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের কয়েকজন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাতাকলম নিয়ে বসে রক্তদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত তাদের তালিকায় ৪৫০ জন রক্তদাতার নাম যুক্ত হয়। তার মধ্যে পাঁচজন ইতোমধ্যে দগ্ধ শিক্ষার্থীদের রক্ত দিয়েছেন। মঈন হোসেন নিশান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যা থেকে রক্তদাতাদের নাম-নম্বর সংগ্রহ করছি। আপাতত রক্ত লাগছে না, কিন্তু যে কোনো সময় দরকার হতে পারে। তখন তালিকায় থাকা নম্বরে ফোন করে রক্ত জোগাড় করব।’ ‘আমাদের বাচ্চারা কষ্ট পাচ্ছে’ এ মর্মস্পর্শী বাক্য হৃদয়ে নিয়ে গতকাল জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে জড়ো হয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও। তাঁরা বলেন, ‘রক্তের দরকার শুনে ছুটে এসেছি। আমাদেরও রক্ত আছে, ভালোবাসা আছে। রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করুন, আমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত।’