কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে মোড় নেওয়া অগ্নিঝরা জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ২৩ জুলাই আন্দোলন দমনে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালায় পুলিশ বাহিনী। ওইদিন সারা দেশে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার ছাত্র-জনতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বেশির ভাগই ছিল বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। একই দিন সরকারি চাকরির নিয়োগে সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ওইদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দুটি পক্ষ থেকে পৃথক বিবৃতি দেওয়া হয়। প্রথম পক্ষ ছিলেন সমন্বয়ক নাহিদ-হাসনাত-সারজিসরা। তারা অবিলম্বে কারফিউ তুলে দেওয়া, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু করাসহ ‘জরুরি’ চার দফা দাবিতে সরকারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে তারা নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এই চার দফা না মানলে তাদের মূল দাবি আট দফা নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে না বলে জানান সমন্বয়ক সারজিস আলম।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেদিন সারজিস আলম বলেন, ইন্টারনেট সচল করতে হবে, কারফিউ তুলে দিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই চারটি জরুরি দাবি দুই দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি করা হলে উ™ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের দেওয়া আটটি দাবি বাস্তবায়নে কথা বলার পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমরা ক্যাম্পাসে যাব কি না এবং আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করব কি না, তা নির্ভর করছে আমাদের এই জরুরি চারটি দাবি মেনে নিয়ে সরকার কতটুকু উপযোগী পরিবেশ তৈরি করছে, তার ওপর।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার, অপপ্রচার, কারফিউ এবং ডিজিটাল ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টার পর সরকার কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের কোটা দিয়েছে। আমাদের সরকারবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাজাকারের সন্তানসহ নানা ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালত শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। সে অনুযায়ী, সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। তবে কোটা ব্যবস্থার প্রধান স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে যারা কোটা পান, তারাও স্টেকহোল্ডার। এ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা না বলে এর বাস্তবায়ন গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপর একটি অংশ ৯ দফা দাবিতে পরদিন ২৪ জুলাই দেশব্যাপী গণসংযোগ এবং মুখে কালো কাপড় বেঁধে বাসাবাড়ি ও রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এ অংশের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সংগঠনের ৫৬ সমন্বয়কের নাম উল্লেখ করা হয়।
মূলত ১৯ জুলাই এই ৯ দফা ঘোষণা করেন সমন্বয়ক আবদুল কাদের। ৯ দফার প্রথম দফা ছিল ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নাহিদ-হাসনাত-সারজিসরা এই দফাটি বাদ দিয়ে ওইদিন আট দফার কথা বলেন।
এদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ একাধিক কর্মসূচি পালন করবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চাঁদপুর ও কুমিল্লায় পদযাত্রা কর্মসূচি করবে। রাজধানীর শাহবাগে ‘জুলাইয়ে লাশের সারি’ শীর্ষক প্রতীকী স্মৃতিস্তম্ভ প্রদর্শন এবং দৃক গ্যালারিতে ফ্যাসিস্ট কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করবে বিএনপি। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য ও গণপ্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।