বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের আগে ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন। তবে ঢাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি। গত মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ মার্চ চীন সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এই সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন তিনি। উৎপাদন খাতে চীনা বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। ড. ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় নেতা যিনি চার মাসের মধ্যে চীন সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চার দিনের সফরে চীন ভ্রমণ করেছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। শফিকুল আলম বলেন, ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে উষ্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চান। আমরা আসলে আমাদের আগ্রহ দেখিয়েছি এবং গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই ভারতীয় পক্ষকে প্রধান উপদেষ্টার ভারত সফরের জন্য নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করেছি। চীন সফর চূড়ান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত এতে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ড. ইউনূস চীন সফর শেষে দেশে ফিরে এসে ৩ থেকে ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক-এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এই সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি দিল্লি। ২৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মোট তিন দিন চীন সফরে থাকবেন ড. ইউনূস। এ সময় তিনি চীনের বিশিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
শফিকুল আলম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চীনা বিনিয়োগকে নেতিবাচকভাবে দেখায়, বাংলাদেশ বেসরকারি চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ২৮ মার্চ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক। একই দিন ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। আগের দিন ২৭ মার্চ বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবেন অধ্যাপক ইউনূস।
দ্য হিন্দু বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে ড. ইউনূসকে চীনা জনগণের পুরোনো বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন ওয়াং। পরে ড. ইউনূস চীনকে বাংলাদেশে সৌর প্যানেল তৈরির আহ্বান জানান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর বেশ আকর্ষণ তৈরি করেছে। কেননা সফরটি এমন সময় হচ্ছে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী সম্পর্ক পুনর্গঠন করছেন এবং বিভিন্ন দেশে পালটাপালটি শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির প্রধান ইঞ্জিনে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য, ভুটান এবং নেপাল উপকৃত হবে। ভাষণে তিনি চীন সফরের ঘোষণা দিয়ে বলেন, মালয়েশিয়াও তাকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যা তিনি গ্রহণ করেছেন। ভারত, নেপাল, ভুটান এবং চীনের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবসা-বান্ধব অর্থনৈতিক হাব হিসেবে তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত আমাদের একটি দীর্ঘ উপকূলরেখা রয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকটি শিল্পাঞ্চল এবং বন্দর হতে পারে।