মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে (ডিএনসি) পৃথক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ সেল হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ দুই সেলের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য ১১২টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। পরে কার্যক্রমের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএনসির অপারেশন্স এবং গোয়েন্দা শাখার অধীনে পরিচালিত হবে দুটি ইউনিটের কার্যক্রম। বৈশ্বিক অপরাধের বহুমাত্রিকতার কারণে ডিএনসির এমন প্রস্তাবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সবুজসংকেত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ডিএনসির মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান বাস্তবতায় সাইবার এবং মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তের জন্য দুটি সেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছে। আশা করছি শিগগিরই জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে যাব।
ডিএনসি সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশের অনেক মাদক কারবারি আন্তর্জাতিক চক্রে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা মাদকের মূল্য পরিশোধ করছেন ডার্ক ওয়েবে থাকা ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রায়। তবে বিশেষায়িত ইউনিট না থাকায় এসব মামলার তদন্তে কূলকিনারা করা সম্ভব হচ্ছে না। এর সুযোগ নিচ্ছেন অপরাধীরা। জামিনে বেরিয়ে এসে ফের লিপ্ত হচ্ছেন আগের পেশায়। জানা যায়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধিত, ২০১৫) অনুযায়ী ১৬টি অনুসন্ধান ও চারটি মামলা দায়ের করছে ডিএনসি। ইতোমধ্যে দুটির অভিযোগপত্র আদালতেও দাখিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সাইবার ক্রাইম অপরাধের জন্য কোনো মামলা হয়নি।
২০২২ সালের ৫ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থেকে এলএসডিসহ নাজমুল ইসলাম নামের এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। ডার্ক ওয়েব থেকে অর্ডার করে বিট কয়েন দিয়ে বিদেশ থেকে এলএসডি নিয়ে আসতেন নাজমুল। ২০২০ সালেও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত কুশ ও গাঁজার তৈরি চকলেট ও কেক জব্দসহ রাসেল মিয়া, রমজান মিয়া ও মো. ইমরান ওরফে রাজ নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএনসি বলছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে খেলনা বাক্সের একটি পার্সেলে করে মাদক নিয়ে এসেছিলেন। জানা গেছে, মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট ২৭ ধরনের অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিবেশ অধিদপ্তর, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ক্ষমতা দেওয়া হয়। জানা যায়, ২০ বছরে তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি মামলা করেছেন। অথচ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছেন মাত্র চারটি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা করতে বলা হয়। সেই সূত্র ধরে ডিএনসিতে পৃথক সেল গঠন বাস্তবতার দিকে এ গিয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ডিএনসির পৃথক দুটি ইউনিটের প্রধান হবেন দুজন অতিরিক্ত পরিচালক। তারা ডিএনসির অপারেশন্স এবং গোয়েন্দা উইংয়ের অধীনে কাজ করবেন। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সেলের জন্য চারজন উপপরিচালক (ডিডি), আটজন সহকারী পরিচালক (এডি), আটজন পরিদর্শক, দুজন অফিস সহকারী, আটজন সিপাই, চারজন অফিস সহায়ক মোট ৩৫ জন জনবল চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ সেলের জন্য একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে ৭৭ জন জনবল চাওয়া হয়েছে।