অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, উদ্যমী এবং সৃজনশীল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যে কোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চেয়ে দুঃসাহসী। তারা নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিতে চায়। সে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত। ছেলেরাও প্রস্তুত, মেয়েরাও প্রস্তুত।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘একুশে পদক-২০২৫’ অনুষ্ঠানের তিনি এ কথা বলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৭ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল চলতি বছরের (২০২৫) একুশে পদক পেয়েছেন। বিজয়ীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে নিজ নিজ পদক গ্রহণ করেন। মরণোত্তর একুশে পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা পদক গ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রেবিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে। একুশে পদকপ্রাপ্তদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের অবদানের জন্য জাতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আপনারা জাতির পথপ্রদর্শক। আপনাদের অবদানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি দৃঢ় বিশ্বাসে জাতিপুঞ্জের মজলিসে ক্রমাগতভাবে উন্নততর অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। ড. ইউনূস বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুযোগ এসেছে নতুন এক বাংলাদেশ নির্মাণের। এই পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দেশমাতৃকার জন্য বিভিন্ন লড়াই-সংগ্রাম, বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ’২৪-এর গণ অভ্যুত্থানে যেসব সাহসী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। এই মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের স্মরণীয় দিনে তরুণদের স্বপ্নের আশু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এই কামনা করছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম ঘুণে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়। যে সভ্যতার মূল লক্ষ্য থাকবে পৃথিবীর সব সম্পদের ওপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন দেখার এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ নিশ্চিত করা। মানুষের জীবনযাত্রাকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে করে পৃথিবীর অস্তিত্ব কোনোরকমে বিঘিœত না হয় এবং পৃথিবীর ওপর বসবাসরত সব প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকা কোনো ক্রমেই বিঘিœত না হয়। এবার একুশে পদক পেয়েছেন চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) এবং ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন, চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা, সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, গবেষণায় মঈদুল হাসান, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে কবি হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) এবং শহীদুল জহির (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দলগতভাবে মেহেদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত) ও শাবাব মুস্তাফা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে একুশে পদক পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।
