বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ‘পুলিশ সপ্তাহ’ উদ্যাপন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নতুন বছরের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর। তবে এ নিয়ে নানা মতামত আসছে শীর্ষ কর্মকর্তাদের তরফ থেকে। কেউ অতীতের মতো মেগা অনুষ্ঠান না করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে জেলা পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব ইউনিট কমান্ডারদের নিয়ে বিশেষ ব্রিফিং আয়োজনের পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেকে বিশেষ প্যারেডের ব্যবস্থা রাখতে আবার কেউ কেউ গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী পুলিশ সদস্যদের কর্মকান্ডের স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধস্তনদের পক্ষ থেকে পুলিশ সপ্তাহ আয়োজনের চাপ থাকলেও বিষয়টি এখনো ভাবনার পর্যায়ে রেখেছে সদর দপ্তর। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) রেজাউল করিম বলেন, ‘এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্যারেড ছাড়া ছোটখাটো ব্রিফিংয়ের পক্ষে অনেকে মত দিয়েছেন। তবে তা-ও চূড়ান্ত নয়।’ রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে পুলিশ সপ্তাহ উদ্যাপন করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের কারণে ২০১৯ সালে পুলিশ সপ্তাহ হয় ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। ২০২৪ সালেও একই কারণে পুলিশ সপ্তাহ পিছিয়ে নেওয়া হয় ফেব্রুয়ারিতে। পুলিশ সপ্তাহে বিগত বছরে বাহিনীর সদস্যদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়ে উঠছে নানা ধরনের দাবিদাওয়া উত্থাপনের অনুষ্ঠান। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটপ্রধান অতিথির উপস্থিতিতে প্যারেড উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ চৌকশ কর্মকর্তাদের বিপিএম ও পিপিএম প্রদান করেন প্রধান অতিথি। প্রধান অতিথির কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাসও আসে।
একাধিক সূত্রমতে, গত ডিসেম্বরে পুলিশ সপ্তাহ উদ্যাপনের বিষয়ে বিভিন্ন ইউনিটের কাছে মতামত চাওয়া হয় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। অনেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে কলঙ্কিত অধ্যায়ের সহযোগীদের চাকরিতে বহাল রেখে তা উদ্যাপন না করার পক্ষে মত দেন। অনেকে আবার বলেছেন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী তা আয়োজন করতে। এ কারণে সদর দপ্তর থেকে পুলিশ সপ্তাহ উদ্যাপনের জন্য কোনো ইউনিটকে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার নাজমুল করিম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সদর দপ্তর থেকে এখনো আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমার মতামত আগে ইমেজ পুনরুদ্ধার হোক। এখনো ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেক সহযোগী পুলিশে কর্মরত রয়েছেন। তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি হয়েছেন মাত্র। আবহাওয়া পরিবর্তন করলেই তাদের আগের চেহারায় দেখবেন।’
সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ‘এখনো তো ট্রমাই কাটিয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ। এখনই পুলিশের বড় একটি অংশকে এমন একটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে কেন? জাতিকে সেবা দেয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই পুলিশের মূল কাজ। তবে সাদামাটাভাবে এক দিনের একটা সম্মেলন বা ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা যেতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেরা পদক না নিয়ে অধস্তনদের দিতেন। মূল কাজ তো করে জুনিয়র অফিসাররা। গত ১৫ বছরে আমরা যা দেখেছি তা সত্যিই লজ্জার।’