তিনি জানেন না কিছুই। কখনো যাননি ভারতেও। তবুও তাকে নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটছে ভারতে, রাজনীতিতে চলছে তুলকালাম।ভারতের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এক ব্রাজিলিয়ান নারী। তিনি পেশায় রূপসজ্জাকার (হেয়ারড্রেসার) বলে জানা গেছে। লারিসা নেরি নামের ওই নারী বিষয়টি দেখে রীতিমতো হতবাক হয়েছেন।
সম্প্রতি ভারতের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী হরিয়ানা রাজ্যের ভোটার তালিকা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ করার সময় তার ছবি ব্যবহার করলে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। শুরুতে পুরো ঘটনাটা ভুল বা নিছক একটা প্র্যাঙ্ক বলে মনে করেছিলেন লারিসা।
বিবিসিকে লারিসা জানিয়েছেন, প্রথমে তার সোশ্যাল মিডিয়ায় দু-একটা মেসেজ আসছিল। তিনি ভেবেছিলেন কেউ হয়তো ভুল করে তাকে নক করছেন। এরপর তার মুখ একটি বড় পর্দায় দেখা যাচ্ছে এমন একটি ভিডিও অনেকে ট্যাগ করে পাঠাতে শুরু করলে তিনি ঘাবড়ে যান। তিনি বলেন, প্রথমে মনে হলো এটা এআই বা কোনো রসিকতা। কিন্তু এত মানুষ একসাথে মেসেজ দিতে শুরু করায় বুঝলাম, এটা সত্যি।
ব্রাজিলের মিনাস গেরাইস রাজ্যের রাজধানী বেলো হরিজন্তের বাসিন্দা লারিসা নেরি কখনোই ভারতে আসেননি। তিনি গুগলে খুঁজে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করেন।
বুধবার রাহুল গান্ধী এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত বছর হরিয়ানা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করেছে। তিনি দাবি করেন, রাজ্যের প্রায় ২ কোটি ভোটারের মধ্যে ২৫ লক্ষই ছিল ভুয়া। যার মধ্যে নকল ভোটার, একাধিক ভোটারের নাম ও ভুল ঠিকানা রয়েছে। তিনি এই জালিয়াতির কারণেই হরিয়ানা নির্বাচনে কংগ্রেসের হার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তিনি একাধিক স্লাইড দেখান, যার একটিতে দেখা যায় তার সামনে লারিসা নেরির একটি বড় ছবি, আর অন্যটিতে ২২ জন ভিন্ন নাম ও ঠিকানার ভোটারের ছবিতে কেবল লারিসার মুখের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। রাহুল গান্ধী সেই সময় বলেন, এই নারী কে? কত বয়স? ইনি হরিয়ানায় ২২ বার ভোট দিয়েছেন। তিনি লারিসাকে একজন মডেল হিসেবে বর্ণনা করেন, যার একটি স্টক ফটো একাধিক ভোটারের তালিকায় ব্যবহার করা হয়েছে।
২৯ বছর বয়সী লারিসা নেরি বিবিসিকে নিশ্চিত করেন যে ছবিটি তাঁরই, যদিও সেটি তাঁর অনেক কম বয়সের। তিনি বলেন, হ্যাঁ, এটা আমি। অনেক কম বয়সের, কিন্তু আমিই। ছবিতে যে ব্যক্তিটি আছে, সে আমি। তিনি স্পষ্ট করেন, তিনি কোনো মডেল নন, একজন হেয়ারড্রেসার। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ২১ বছর বয়সে তার বাড়ির বাইরে ব্রাজিলিয়ান ফটোগ্রাফার ম্যাথিউস ফেরেরো ছবিটি তুলেছিলেন।
গত দু'দিনে ভারত থেকে আসা অসংখ্য ফোন এবং মেসেজের কারণে তিনি ভীত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমি ভয় পাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি না এটা আমার জন্য বিপজ্জনক কি না বা এটা নিয়ে কথা বললে সেখানকার কারো কোনো ক্ষতি হতে পারে কি না। আমি জানি না কে সঠিক বা ভুল, কারণ আমি জড়িত দলগুলোকে চিনি না।
সাংবাদিকদের কারণে তার কর্মস্থলেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আমার কাজ করার জায়গার নম্বরও খুঁজে বের করেছেন... আমার বসও আমার সাথে কথা বলেছেন। কেউ কেউ এটাকে মজার বিষয় মনে করলেও এটা আমার পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলছে।
ছবিটির ফটোগ্রাফার ম্যাথিউস ফেরেরোও এই হঠাৎ মনোযোগে হতবাক। তিনি ছবিটি ২০১৭ সালে তুলেছিলেন এবং লারিসার অনুমতি নিয়ে একটি স্টক-ফটো ওয়েবসাইটে আপলোড করেন। তিনি এখন সেই লিঙ্কটি মুছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভয়ের কারণে ছবিগুলো মুছে দিয়েছি, কারণ ছবিগুলো অপব্যবহার হচ্ছিল।
লারিসা নেরি বা ম্যাথিউস ফেরেরো কেউই কখনো ভারতে যাননি। পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা কীভাবে তাঁদের জীবন উলটপালট করে দিলো, তা তারা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল