জোহরান মামদানি এখন বিখ্যাত। তার আগে নিউইয়র্কের মেয়র কে ছিলেন সে খবর হয়তো কেউই রাখেনি। কেউ তাদের নামও জানতো না। তবে মামদানি গোটা বিশ্বের আলো কেড়েছেন। মেয়র নির্বাচন করেও তিনি প্রায় প্রেসিডেন্টের সমান মিডিয়া কাভারেজ পেয়েছেন।
তবে কথার এখানেই শেষ নয় বরং আরও কারণ আছে। মামদানি আলোচনার থাকার মূল কারণ হলো তিনি মূলত প্রচলিত মার্কিন অহমে আঘাত হেনেছেন। সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন আমেরিকার বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাকে আটকাতে পারেননি। কেবল তাই নয় মামদানিকে আটকাতে কারি কারি ডলারের খেলাও চলেছে। তবে সেই খেলাতেও বাজিমাত করেছেন এই মুসলিম তরুণই।
ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানির নির্বাচনী প্রচারের মূল ভিত্তি ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, যার মধ্যে শহরের মুদির দোকান, বিনামূল্যে গণপরিবহন এবং সর্বজনীন শিশুযত্ন পরিবেষার মতো সাহসী নীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিন্তু এই প্রগতিশীল প্ল্যাটফর্মের কারণে তিনি আমেরিকার কিছু ধনী ব্যক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিপোর্ট অনুসারে, কমপক্ষে ২৬ জন বিলিয়নিয়ার এবং ধনী পরিবার সম্মিলিতভাবে তার বিরোধীদের সমর্থন করতে থাকে। তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে ২২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ খরচ করেছে তারা। এদের মধ্যে ছিলেন ব্লুমবার্গ এলপি-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ, হেজ ফান্ড ম্যানেজার বিল অ্যাকম্যান, এয়ারবিএনবি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জো গেবিয়া এবং এস্টি লডারের উত্তরাধিকারী লাউডার পরিবারের সদস্যরা। এঁদের প্রত্যেকেই অ্যান্ড্রু কুমোর সমর্থনে স্বাধীন ব্যয় কমিটি এবং সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটিগুলিতে কমপক্ষে এক লাখ ডলার করে অনুদান দিয়েছেন।
শুধু মাইকেল ব্লুমবার্গ একাই ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে কুমোকে সমর্থন করার জন্য ৮ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। যেখানে অ্যাকম্যান ১.৭৫ মিলিয়ন এবং লাউডার সাড়ে সাত লাখ ডলারের অনুদান দিয়েছেন। মোট অনুদানের অর্ধেকেরও বেশি, প্রায় ১৩.৬ মিলিয়ন মামদানি ডেমোক্র্যাটিক মনোনয়ন নিশ্চিত করার আগেই এসেছিল।
বিরোধীদের উদ্দেশে ১৩ অক্টোবর একটি সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, বিল অ্যাকম্যান এবং রোনাল্ড লাউডারের মতো বিলিয়নেয়াররা এই নির্বাচনে লক্ষ লক্ষ ডলার ঢেলেছেন কারণ তারা বলছেন আমরা নাকি এক অস্তিত্বগত হুমকি। আমি স্বীকার করতে এসেছি, তারা ঠিকই বলছেন। বিলিয়নেয়ার দাতাদের মধ্যে ১৬ জনই নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাঁর জয়ের পর কিছু ওয়াল স্ট্রিট ব্যক্তিত্ব, যারা প্রথমে মামদানির বিরোধী ছিলেন তারাও এখন সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন। জেপি মর্গ্যান চেজের সিইও জেমি ডিমোন আগে মামদানিকে সোশ্যালিস্টের চেয়ে বেশি মার্কসবাদী বলেছিলেন, তিনিও এখন যোগাযোগ বজায় রাখতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। মামদানি ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল