উৎসবের আনন্দে কালো ছায়া নেমেছে ভারতে। দীপাবলির সময় বিপজ্জনক ক্যালসিয়াম কার্বাইড বন্দুক (Carbide Gun) ব্যবহারের ফলে গত তিন দিনে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বহু শিশু গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ জন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, আরও কয়েকজনের চোখে স্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভোপালের প্রধান চিকিৎসা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সিএমএইচও) মনীশ শর্মা জানান, কার্বাইড পাইপ বন্দুক অত্যন্ত বিপজ্জনক। আহতদের মধ্যে প্রায় ৬০ জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যাদের বেশিরভাগই ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু।
কর্তৃপক্ষ জানায়, দীপাবলির পরদিন ভোপাল জুড়ে কার্বাইড বন্দুক ব্যবহারে ১৫০টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এই বন্দুক থেকে নির্গত গ্যাস ও আগুনের ফুলকি চোখ-মুখে লেগে মারাত্মক জখমের কারণ হয়েছে।
এর আগে, ১৮ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব জেলা প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে বিপজ্জনক এই বন্দুক বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজ্যজুড়ে খোলা বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ রুপিতে দেদার বিক্রি হয় এই বন্দুক।
কার্বাইড বন্দুকটি খেলনার মতো দেখতে হলেও আসলে এটি বোমার মতো বিস্ফোরণ ঘটায়। গ্যাস লাইটার, প্লাস্টিকের পাইপ ও ক্যালসিয়াম কার্বাইডের সংমিশ্রণে তৈরি এই বন্দুকটি চলতি দীপাবলি উৎসবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পানি কার্বাইডের সংস্পর্শে এলে অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি হয়, যা স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে এলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায়। এর টুকরোগুলি দ্রুতগতিতে চোখ-মুখে আঘাত করে দৃষ্টিশক্তি ও ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি ঘটায়।
চিকিৎসক ডা. কবিতা কুমার বলেন, বিস্ফোরণের সময় প্লাস্টিকের টুকরো ও আগুনের ফুলকি চোখ ও ত্বক পুড়িয়ে দেয়। তাই অনেকেই স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে।
আহত শিশুদের পরিবার প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। হামিদিয়া হাসপাতালে ভর্তি ১৪ বছর বয়সী হেমন্ত পান্থী ও ১৫ বছর বয়সী আরিসের পরিবার জানায়, এ ধরনের বন্দুক কোনোভাবেই বিক্রি হওয়া উচিত নয়। যারা এগুলো তৈরি ও বিক্রি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা খরচে সরকারের ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল