যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলের পশ্চিম তীর দখলের উদ্যোগ গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। বৃহস্পতিবার তিনি এই সংকট নিরসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে ইসরায়েল সফরে যান।
বুধবার ইসরায়েলি সংসদ পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার দুটি প্রস্তাব অনুমোদনের পথে এগিয়েছে। এর মাত্র কয়েক দিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। রুবিও বলেন, এই মুহূর্তে পশ্চিম তীর দখলের উদ্যোগ শান্তিচুক্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা মনে করি, এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা পুরো অঞ্চলকে আবার অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে সহিংসতা আরও বেড়েছে। রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে অন্তত এক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অপরদিকে একই সময় অন্তত ৪৩ ইসরায়েলি নাগরিক ও নিরাপত্তা সদস্য প্রাণ হারিয়েছে।
রুবিও এর আগে প্রকাশ্যে পশ্চিম তীর দখল নিয়ে কোনো সমালোচনা করেননি। তবে এবার তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই পদক্ষেপ শান্তিচেষ্টাকে বিপন্ন করবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব আরব ও মুসলিম দেশকে গাজায় স্থিতিশীলতা আনার জন্য সহায়তা দিতে আহ্বান জানাচ্ছে, তারা স্পষ্ট জানিয়েছে—পশ্চিম তীর দখল তাদের জন্য ‘রেড লাইন’।
বর্তমানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরের কিছু অংশে সীমিত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ চালায়।
রুবিওর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফর করেন। তিনি জানান, ‘গাজায় শান্তি রক্ষা কঠিন হলেও আমরা আশা করছি, যুদ্ধবিরতি টিকবে। প্রতিদিন এর সামনে নতুন হুমকি আসবে, তবে আমরা অগ্রগতির পথে আছি।’ ভ্যান্স আরও বলেন, আমাদের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—হামাসকে নিরস্ত্র করা, গাজা পুনর্গঠন করা এবং গাজার মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, হামাস যেন আর কখনো ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়।
ইসরায়েলের দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের সহযোগিতায় একটি ‘সিভিল-মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (CMCC)’ চালু করা হয়েছে। এখান থেকে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ ও ত্রাণ সহায়তা সমন্বয় করা হবে।
ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর অঞ্চলটির নিরাপত্তা দেখবে আরব ও মুসলিম মিত্র দেশগুলোর যৌথ বাহিনী। এই বাহিনীতে কোনো মার্কিন সৈন্য থাকবে না।
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সহযোগীরা যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছে, হামাস পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার আগেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা ভুল ছিল। কিন্তু নেতানিয়াহু এটিকে‘কৌশলগত সাফল্য’ বলে দাবি করেছেন।
এদিকে গাজার সাধারণ মানুষ এখনো দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। যুদ্ধের আতঙ্ক পেরিয়ে তারা এখন বেঁচে থাকার সংগ্রামে। ৪২ বছর বয়সী মাহের আবু ওয়াফা বলেন, যুদ্ধের সময় মৃত্যুর ভয় ছিল, এখন বেঁচে থাকাটাই ভয়ংকর লাগছে। আমাদের জীবন ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের কাছে মানবিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল এই রায়কে ‘রাজনৈতিক চাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল