দক্ষিণ চীনের উপকূলে ধেয়ে আসছে চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। সুপার টাইফুন রাগাসার আঘাতে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ১০টিরও বেশি শহরে স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর ঘূর্ণিঝড়টিকে ঝড়ের রাজা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করছে কর্তপক্ষ।
ঘূর্ণিঝড়টি হংকংয়ের দিকে এগিয়ে আসায় সেখানে আট নম্বর টাইফুন সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ সতর্কতার চেয়ে মাত্র দুই ধাপ নিচে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়ান পরিষেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ক্যাথি প্যাসিফিক এয়ারওয়েজের ৫০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। হংকং এয়ারলাইন্স তাদের সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। শহরের বাসিন্দারা শুকনো খাবার, যেমন— রুটি, সবজি, মাংস এবং ইনস্ট্যান্ট নুডলস কেনার জন্য সুপারমার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন। যার ফলে অনেক তাক খালি হয়ে গেছে।
আগামীকাল বুধবার রাগাসা চীনের গুয়াংডং প্রদেশে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সেখানে প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় নিচু এলাকার বাসিন্দারা বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসের ভয়ে আছেন। অনেক দোকান মালিক তাদের দোকানের সামনে বালুর বস্তা দিয়ে প্রতিবন্ধক তৈরি করছেন। অনেকে তাদের ঘর ও দোকানের জানালা টেপ দিয়ে আটকে দিচ্ছেন যাতে তা ঝড়ের আঘাতে ভেঙে না যায়।
উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, রাগাসার মূল কেন্দ্রটি তাইওয়ান পার হয়ে চীনের দিকে আসছে। তাইওয়ানে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ছয় জন আহত হয়েছেন এবং ১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর আগে সোমবার ঘূর্ণিঝড়টি ফিলিপাইনের একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে আঘাত হানে। এতে অন্তত একজন নিহত হন। হাজার হাজার পরিবারকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাসহ দেশটির বিভিন্ন অংশে স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
রাগাসাকে ক্যাটাগরি ৫ হারিকেনের সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সোমবার এর সর্বোচ্চ বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ২৮৫ কিলোমিটার। ঝড়টির প্রভাবে পুরো অঞ্চলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চীনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, এই ঝড়টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উত্তর ভিয়েতনামের দিকে সরে যাবে, যা সেখানকার লাখ লাখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের ঝড় আরও তীব্র হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন। শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ, ভারী বৃষ্টিপাত এবং উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি বাড়ছে। হংকংয়ের প্রধান প্রশাসক এরিক চ্যান বলেছেন, রাগাসা শহরের জন্য গুরুতর হুমকি" তৈরি করতে পারে, যা ২০১৮ সালের সুপার টাইফুন মাংখুট এবং ২০১৭ সালের টাইফুন হাতোর মতো ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে। মাংখুটের আঘাতে ২০০ জন আহত হয়েছিলেন এবং হংকংয়ের ৪.৬ বিলিয়ন হংকং ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল