শরতের আবহে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজার আগমনী সুর বাজতে শুরু করেছে বগুড়ায়। আর ক’দিন পর মণ্ডপ মুখরিত থাকবে ঢাকির ঢাকের শব্দে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে যষ্ঠির মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে জেলায় প্রতিমার গায়ে রং তুলির আঁচড়ে দৃষ্টিনন্দনভাবে সেজে উঠছে দেবী দুর্গা।
মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গা প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিল্পীর শৈল্পিক কারুকার্যে জীবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিমা। এদিকে সৌন্দর্যবর্ধনে মন্দিরগুলোতে চলছে আলোকসজ্জাসহ নানা আয়োজন।
বগুড়া পূজা উদযাপন কমিটির তথ্য অনুযায়ী জেলার ১২টি উপজেলায় এবার ৬৮১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদরে ১১৯টি, শিবগঞ্জে ৬১টি, আদমদিঘীতে ৬৫টি, দুপচাঁচিয়ায় ৪৫টি, কাহালুতে ৩৩টি, নন্দীগ্রামে ৪৭টি, শাজাহানপুরে ৪৮টি, গাবতলীতে ৭৫টি, সোনাতলায় ৪৭টি, শেরপুরে ৮৪টি, ধুনটে ৩৪টি ও সারিয়াকান্দিতে ২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে থাকবে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা। গত বছর দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল ৬৭৭টি মণ্ডপে। সে তুলনায় এবার দুর্গাপূজার আয়োজন বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার বগুড়ায় ৪টি বেশি মণ্ডপে পূজা হবে।
জানা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বগুড়া জেলায় দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতিমাশিল্পীরা রং-তুলির আঁচড়ে দেবীর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতে নির্মিত কাদা মাটির প্রতিমাগুলোতে এখন জীবন্ত রূপ দান করা হচ্ছে। তাদের হাতের শৈল্পিক ছোয়ায় দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে এক একটি প্রতিমা। যা দৃষ্টিনন্দন ও অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে উঠছে। এই কাজে প্রতিমাশিল্পীরা দিনরাত কাজ করছেন এবং দেবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। এরপর ষষ্ঠির দিন তারা নান্দনিক সৌন্দর্যের দেবীকে বুঝে দিবেন। শুধু প্রতিমা নয়, ডেকোরেটর মিস্ত্রিরাও পূজা মণ্ডপের গেইট, প্যান্ডেল, সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা ও লাইটিংয়ের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
এদিকে এই বিশেষ ক্ষণের জন্য দিন গুনছেন প্রতিটি দেবী ভক্ত অনুরাগীরা। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে যষ্ঠির মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে। ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী ও ২ অক্টোবর দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মণ্ডপে চলছে নানান প্রস্তুতি।
বগুড়া শহরের উত্তর চেলাপাড়া নববৃন্দাবন হরিবাসর মন্দির প্রাঙ্গণে বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরির কারখানায় এ বছর ১৭টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে বগুড়াসহ আশপাশের জেলায় প্রতিমা বিক্রি করা হয়ে থাকে।
কারখানার সত্ত্বাধিকারী কাজল প্রামানিক জানান, অর্ডারমতো প্রতিমায় রঙের ও অলংকরণের কাজ চলছে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ডেলিভারি দেওয়া হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিমা মণ্ডপে মণ্ডপে তোলা হবে। এবার প্রতিমা বানানোর খরচ আগের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, এবার ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৬২ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমা বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, এবার জেলায় ৬৮১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদরে ১১৯টি। ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে যষ্ঠির মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে। ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী ও ২ অক্টোবর দশমী অনুষ্ঠিত হবে। পূজায় মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে বগুড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার ব্যবস্থা। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে বগুড়ার মণ্ডপগুলো। থাকবে সেনা টহল ও নজরদারি। এছাড়া সাধারণ মণ্ডপগুলোতে পুলিশ টহল দিবে। সেইসাথে দায়িত্ব পালন করবে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যরা। টহলে থাকবে র্যাব সদস্যরাও।
বিডি প্রতিদিন/এমআই