শক্তিশালী জোড়া ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। এতে মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছেন আরও ৭৩০ জন। থাইল্যান্ডে অন্তত ৩ জন নিহত ও ৯০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। শুক্রবার (২৮ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৫০ মিনিটে, মিয়ানমারের সাগাইং শহরের ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে, ১০ কিলোমিটার গভীরে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল ৭.৭। কিছুক্ষণ পর ৬.৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে। সামরিক সরকারের কর্মকর্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, "নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"
ভূমিকম্পের প্রচণ্ড কম্পনে মান্দালয় রাজ্যের বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের পুরোনো রাজপ্রাসাদ, মা সো ইয়েন মঠ এবং একাধিক মসজিদ ধসে পড়েছে।
বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, মান্দালয় প্রদেশের ফো শিং মসজিদসহ অন্তত তিনটি মসজিদ ধসে পড়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একজন উদ্ধারকর্মী বলেন, "আমরা যখন নামাজ পড়ছিলাম, তখন হঠাৎ মসজিদটি ধসে পড়ে। অনেক মানুষ আটকে আছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।"
এছাড়া তাওয়াংগো সিটির এক মঠ ধসে পড়ে পাঁচ উদ্বাস্তু শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল।
ভূমিকম্পের আঘাত লেগেছে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়েচাই জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৯০ জন নিখোঁজ রয়েছে। ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ইতোমধ্যে ব্যাংককে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ফাটল ধরেছে এবং উত্তরাঞ্চলীয় শহর চিয়াং মাই-তেও ব্যাপক কম্পন অনুভূত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা দুয়াংজাই, যিনি চিয়াং মাই শহরে থাকেন, এএফপি-কে বলেন, "আমি আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। কম্পন টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাইরে সড়কের দিকে ছুটে গিয়েছি।"
ভূমিকম্পের ফলে মিয়ানমারের মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হতে পারে।
শুক্রবার দুপুরে আঘাত হানা জোড়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। সময় যত গড়াচ্ছে, নতুন নতুন হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র: এপি, স্কাই নিউজ, আনাদোলু, ইউএসজিএস, বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক