রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে বৈঠকের এক পর্যায়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক ছিল যে, আপ্যায়ন ছাড়াই হোয়াইট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যান জেলেনস্কি। এ ঘটনার জেরে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত হতে পারে— এমন আশঙ্কা ছিল। অবশেষে তাই সত্যি হলো। ইউক্রেনের জন্য সব ধরনের সামরিক সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরিকল্পনাও করছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের পর মঙ্গলবার জেলেনস্কি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ইউক্রেনে টেকসই শান্তির লক্ষ্যে তিনি ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বে কাজ করতে চান। ওয়াশিংটনের সঙ্গে খনিজ চুক্তি করতেও প্রস্তুত আছেন তিনি।
দীর্ঘ তিন বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। এই সময়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পেয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সহায়তা দেন। গত ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়ার আগে কিয়েভের জন্য আরও ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র, সামরিক যান ও অন্যান্য সরঞ্জাম অনুমোদন দেন বাইডেন।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন মূলত সেই অস্ত্র ও সরঞ্জামগুলোর চালান স্থগিত করেছে।
প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে বলেছেন, অস্ত্রগুলোর চালান পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি, সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
আর ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, পুরনো চালানের যেসব অস্ত্র ইউক্রেনে যাচ্ছিল, তার সবই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে। যেসব অস্ত্র এরই মধ্যে সরবরাহের জন্য উড়োজাহাজে তোলা হয়েছে এবং পোল্যান্ডের ট্রানজিট এলাকায় জাহাজে মজুত রয়েছে, সেগুলোও ফেরত আনা হবে।
অস্ত্রের এই চালান স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। ওই নির্দেশের পর হেগসেথের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। এরপর ইউক্রেনে অস্ত্রসহায়তা স্থগিত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ জেলেনস্কির
ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে জেলেনস্কি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, “ইউক্রেনে টেকসই শান্তির জন্য তিনি ও তার দল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক যেভাবে এগোনোর কথা, সেভাবে এগোয়নি। এটা ঠিক করার এখনই সময়।”
জেলেনস্কি আরও লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি করতে প্রস্তুত কিয়েভ। যেকোনও সময় ও যেকোনও উপযুক্ত কাঠামোয় সেই চুক্তি করতে রাজি ইউক্রেন।” সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ
বিডি প্রতিদিন/একেএ