মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যার পা নেই সেই বুঝে পায়ের মর্মকথা। আর যাদের পা থেকেও সঠিকভাবে হাঁটা চলাফেরা করতে পারছেন না তাদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। পায়ের গোড়ালির ব্যথা এখন কমন রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে হাঁটাচলার সময় প্রায়ই ব্যথা অনুভব করেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পা মাটিতে বা মেঝেতে ফেলতেই যখন বুঝতে পারবেন পা ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হয় ব্যথার ধরন কিছুটা কাঁটা ফোটার মতো কয়েক কদম হাঁটার পর একটু একটু করে ব্যথা কমতে শুরু করে। আবার রাতে পায়ের ‘কাফ’ বা পেছনের পেশিতে এবং পায়ের পাতায় প্রচণ্ড ব্যথায় নির্ঘুম রাত কাটান কিছু মানুষ। সারাদিন কোনো ব্যথা নেই, রাতে হলেই এই ব্যথা হানা দেয়। মাঝেমধ্যে ব্যথা ঊরুতেও উঠে আসে। কখনো ব্যথার তীব্রতা এতই বেড়ে যায় যে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠতে হয়, শক্ত হয়ে ওঠে পেশি। পায়ের পাতার এ ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে সারারাত ভোগাতে পারে এই ব্যথা এ নিয়ে ভোগান্তির অন্ত নেই। তাই সচেতন হোন।
ব্যথার কারণ : ১. প্লান্টার ফ্যাসাইটিস, ২. রিট্রোক্যালকেনিয়াল স্পার
৩. টারসাল টানেল সিনড্রোম, ৪. আঘাত জনিত কারণ
৫. অস্বাভাবিক পায়ের আকৃতি, ৬. অতিরিক্ত ওজন ৭. মধ্য/পার্শ্বিক নার্ভ বাধাপ্রাপ্ত হওয়া ৮. দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে কাজ করা ৯. দীর্ঘদিন হাই হিল বা শক্ত সোলের জুতা ব্যবহার করা। ১০. ফ্ল্যাট ফুট।
১১. টিউমার এবং সিস্ট। ১২. কখনো কখনো ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকার কারণেও গোড়ালি ব্যথা হতে পারে।
লক্ষণ : ১. পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হবে। সাধারণত হাঁটলে সেটা আরও বেড়ে যায়। ২. গোড়ালি কখনো কখনো ফুলে যেতে পারে। ৩. খালি পায়ে শক্ত জায়গায় হাঁটলে সাধারণত ব্যথা বেশি বাড়ে। ৪. পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা সকালে বেশি থাকে এবং তা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু কমে আসে। ৫. অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসার পর পা ফেলতে কষ্ট হয়।
৬. কখনো কখনো গোড়ালি শক্ত মনে হয়। ৭. আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে ও গরম অনুভব হয়।
৮. পায়ের পাতা একটু অবশ বা প্যারালাইসিস ভাব হয়।
রোগ নির্ণয় : রোগ নির্ণয় জরুরি, চিকিৎসার প্রথম শর্ত সঠিক রোগ নির্ণয়। ১. রক্ত পরীক্ষা ২. এক্স-রে
৩. এমআরআই ৪. হাড়ের স্ক্যান
চিকিৎসা : ১. জীবনধারা পরিবর্তন।
২. খালি পায়ে হাঁটা নিষেধ।
৩. জুতা পাল্টানো যেমন- সঠিক মাপের জুতা পরিধান করা, নরম সোল ব্যবহার করা, হিল কুশন, হিল প্যাড, ইনসোল ফুট ব্যবহার, আর্চ সাপোর্ট দেওয়া, গোড়ালির কাছে ছিদ্র করে নেওয়া ইত্যাদি। ৪. শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা। ৫. চিকিৎসকের নির্দেশমতো পায়ের ব্যায়াম নিয়মিত করবেন। প্রত্যহ ১০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে দুই বেলা পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন। ৫. নতুন ব্যথায় ঠান্ডা সেক কার্যকরী। ৬. সাত দিন বিশ্রাম নিতে পারেন। ৭. গোড়ালি ব্যথায় ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী ও নিরাপদ চিকিৎসা, তা হতে হবে সঠিক ও বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। তাই প্রয়োজনে
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাই এসব ব্যথাকে অবহেলা না করে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই চিকিৎসা
নিতে হবে। অন্যথায় একটা পর্যায় জটিলতা বাড়তে পারে।
লেখক : মো. সফিউল্যাহ প্রধান, রিহেবিলিটেশন স্পেশালিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস), ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা।