রোজার এক মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে যে পরিবর্তন আসে, সেটাতেই অনেকে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। আর ঈদের দিনে আনন্দের অন্যতম আয়োজনটাই হলো নানা রকমের খাবার-দাবার। তাই এ সময় খাবার গ্রহণে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ঈদ উৎসবের স্থায়িত্বকাল তিন থেকে সাত দিন।
সাধারণভাবে ঈদের প্রথম দু-এক দিন খাবারের উৎসব আয়োজনটা একটু বেশিই থাকে। যদি আপনার বয়স ৩০ এর মধ্যে হয়, তবে এসব ব্যক্তির ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত খাবার ৭-১০ দিন ধরে খাওয়া যাবে না। এতে আপনার শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঈদের খাবারে সাধারণত প্রচুর তেল-চর্বি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বিদ্যমান থাকে এবং সাধারণত শাকসবজি এবং ফলমূল খুবই অল্প পরিমাণে বিদ্যমান থাকে।
তাই এ ধরনের খাবার লম্বা সময় ধরে খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, ফিস্টুলা, অ্যানালফিসার, পেটে গ্যাস ও পেট ফাঁপার মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। কাজেই ঈদের খাবারেও প্রয়োজন অনুসারে শাকসবজি ও ফলমূল রাখা বাঞ্ছনীয়। এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমবে। বাংলাদেশে ঈদের খাদ্যে অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের রেওয়াজ রয়েছে।
এসব খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ক্ষুধামন্দা, বদহজম, পেটে গ্যাস ইত্যাদি দেখা দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচ্য। ঈদের খাবারের আরও একটি বড় উপাদান হলো মাংস ও ডিম। এদের প্রোটিনের বড় উৎস বলে মনে করা হয়। সাধারণভাবে প্রোটিন খেতে কোনোরূপ বাধা নেই।
কিন্তু আলোচিত যে দুটি খাবার থেকে প্রোটিন আসে যেমন-মাংস ও ডিম (যার সঙ্গে অবশ্যই চর্বি থাকবে) বিশেষ করে গরু বা খাসির মাংস এবং ডিমের কুসুম। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে অতিমাত্রায় চর্বি গ্রহণ প্রায় ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক। ডিমের কুসুমে প্রচুর চর্বি থাকে এক্ষেত্রে ডিম খাওয়ার পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বজায় রাখতে হবে। তা না হলে চর্বি গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে।
অনেক হৃদরোগী প্রায়ই প্রশ্ন করে থাকেন এ ধরনের খাবারগুলো ঈদের মেন্যুতে জনপ্রিয় আইটেম হওয়ায় এগুলো খেতে না পারা তাদের মনঃকষ্ট হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই এসব ব্যক্তির বয়স ৫০-৬০ বয়সের ঊর্ধ্বে হয়ে থাকে, এসব ব্যক্তির বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ায় এবং তাদের শারীরিক কর্মকাণ্ড অনেক বেশি কম হওয়ার দরুন খাদ্যের চাহিদাও কমে যায়। তার সঙ্গে হজম প্রক্রিয়াও ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে এসব ব্যক্তির অল্প পরিমাণে খাদ্য গ্রহণের ফলে উদরপূর্তি ঘটে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই ওজনাধিক্যে ভুগতে থাকেন, অনেকের পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে।
এত কিছু বিবেচনা করে দেখা যায় যে, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ এবং চাহিদা দুই-ই কমে যায়। অনেক চিকিৎসক এসব রোগীকে বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। সেমতে বেশি বেশি শাকসবজি গ্রহণ করার ফলে অন্যসব খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ এমনিতেই কমে যায়, কারণ প্রত্যেকেরই খাদ্য গ্রহণের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বজায় থাকে। কোনো এক জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করলে অন্য জাতীয় খাবারের পরিমাণ কম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। সবকিছু বিবেচনা করে হৃদরোগীদের খাদ্য গ্রহণের বিভিন্নতা ও উপাদানের অনুপাত ঠিক রেখে সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে।
মোট খাদ্যের পরিমাণের অর্ধেক শাকসবজি ও ফলমূল এক চতুর্থাংশ শর্করা জাতীয় খাবার বাকি এক চতুর্থাংশ আমিষ তেল-চর্বি ও অন্যান্য খাদ্যবস্তু গ্রহণ করতে হবে। তাতে করে হৃদরোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে খাদ্যকে হৃদবান্ধব করা যাবে। ঈদে দুই এক বেলা হৃদরোগীদের পছন্দনীয় খাবার গ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই। তবে সারা দিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই উপরের অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। এর ফলে ঈদের মুখরোচক খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করলে ক্ষতির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
ঈদে যেকোনো খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণে হৃদরোগীরা তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। হৃদরোগীদের ঈদে খাদ্য গ্রহণের ধরনের চেয়ে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অতিভোজন গ্রহণযোগ্য নয়। চলতি বছর ঈদ রোদ এবং অনেকটাই গরমের সময় হওয়ায় মানুষের শরীরে পানি গ্রহণের চাহিদা অত্যাধিক বৃদ্ধি পাবে এবং এটা অবশ্যই মনে রাখবেন, খাদ্যবস্তু হজম করার জন্যও প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়।
তাই ঈদের খাবারে প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় উপাদান বিদ্যমান থাকা জরুরি। নিরাপদে ঈদ যাপন করুন ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। যা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকেও সমন্বিত করবে।
লেখক: চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ