গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখতে সংবিধানে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষায় প্রয়োজন অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করতে হবে।’ গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানো প্রশ্নে আপিল শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পেছনে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল তা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভ্রান্তপ্রসূত। গুডের বিপরীতে ব্যাড শব্দের চেয়ে যদি কোনো শব্দ থেকে থাকে, এ সরকারব্যবস্থা বাতিল করায় তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে কোহিনুর হীরার মতো মূল্যবান, যেটা রক্ষার জন্য সংবিধানে যা প্রয়োজন সেভাবে সংশোধন করতে হবে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বিগত সময়ে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। সেই সঙ্গে আমলাতন্ত্র ও আইনের শাসন ভেঙে পড়ে।’
১৪ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। পরে এ রায় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ বছর আগের বিতর্কিত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট আবেদন করেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি। পরে ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পাঁচ দিন পর ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া আরেকটি আবেদন করেন নওগাঁর রানীনগরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন।
এরপর আরও দুটি আবেদন করা হয়।
রিভিউ আবেদনে আপিল করার অনুমতি দিয়ে আপিল শুনানি হবে নাকি রিভিউ আবেদনেই চূড়ান্ত শুনানি হবে, এ নিয়ে দুই দিন শুনানির পর গত ২৭ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত জানান। ছয়টি আবেদনের মধ্যে একটিতে আপিলের অনুমতি দিয়ে চারটি আবেদন এর সঙ্গে যুক্ত করে দেন আপিল বিভাগ। অন্য আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে শুনানির জন্য রেখেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। সেই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট শুনানি শুরু হয়।