গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আরপিওতে এবার একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে এবং ইভিএম ব্যবহারসংক্রান্ত বিধান বিলোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনি অনিয়মের কারণে পুরো সংসদীয় আসনের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল বা এমপি নির্বাচিত হলেও বাতিল হবে এমপি পদ। গতকাল আরপিও নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
এদিন সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নবম কমিশন সভার মুলতবি বৈঠক হয়। পরে সন্ধ্যায় ইসির সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, সবখানে না ভোট নয়, একক প্রার্থী হলে না ভোট থাকবে। জোট হলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে; এতে কমিশন অন্যান্য বাহিনীর মতোই সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর সদস্যদের আইনশৃঙ্খলায় নামাতে পারবে। বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম ব্যবহার করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। এখন আরপিও থেকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ আরও বলেন, এবার ভোটে ইভিএম ব্যবহার হবে না, তাই যাবতীয় বিধান বিলোপ করা হয়েছে আরপিওর প্রস্তাবিত সংস্কারে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের তদন্ত ও ব্যবস্থা ইসিকে জানাতে হবে তিন দিনের মধ্যে। উল্লেখ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব আসনে না ভোটের বিধান ছিল। পরে নবম সংসদে তা বাদ দেওয়া হয়। এবার না ভোটের বিধান চালুর প্রস্তাব ছিল সংস্কার কমিশনেরও। কিন্তু ইসি সব আসনে না ভোটের বিধান চালু না করলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধে শুধু একক প্রার্থী থাকলে তাকে না ভোটের সঙ্গে লড়তে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, না ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যদি কোথাও একজন প্রার্থী হয় সে ক্ষেত্রে বিনা ভোটে নির্বাচিত হবে না। সার্বিকভাবে না ভোট নয়। যদি কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকে, তাহলে তাকেও নির্বাচনে যেতে হবে, তাকে না প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে পুনরায় না ভোট বিজিত হলে তাহলে আর ভোট হবে না। তখন ব্যক্তি প্রার্থী নির্বাচিত হবে। আরপিও একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বলে জানান তিনি। সরকারের সায় পেলে তা সংশোধন অধ্যাদেশ নামে জারি হবে। সেই সঙ্গে ঐকমত্য কশিমনের কোনো সুপারিশ থাকলে তা পরে যুক্ত করা হবে। কমিশনার সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের আরও জানান, ফলাফল স্থগিত এবং বাতিল নিয়ে যে বিধানগুলো ছিল, যেখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করার বা ফলাফল বাতিল করার যে সক্ষমতা সেটাকে সীমিত করা হয়েছিল। সেটা আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে এক বা একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন স্থগিত, একইভাবে এক বা একাধিক বা পুরো আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে। সানাউল্লাহ বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরাও ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা থাকতে চাইবেন তাদের পুরোটা সময়ব্যাপী থাকতে হবে। মাঝপথে বের হয়ে যাওয়া যাবে না।’