জুলাই গণ অভ্যুত্থানের চতুর্থ দিনে তীব্র আকার ধারণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন। এদিন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল রাখার আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত থেকে বলা হয়, ‘রাস্তায় এত কীসের আন্দোলন শুরু হয়েছে? আন্দোলন করে কি হাই কোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’। এমন বক্তব্যের পর ফুঁসে ওঠে আন্দোলনকারীরা। তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ।
রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ময়মনসিংহে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন শুক্র ও শনিবার জনসংযোগ কর্মসূচি এবং রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেন।
আন্দোলনের তৃতীয় দিনে প্রথমবারের মতো বাধা দেয় বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। ওইদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিলে তাদের বাধা দেয় দলটির নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের বাধা আর বৃষ্টি দুটোই উপেক্ষা করে দুপুরে শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। তাদের ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো, কোটা পদ্ধতি বাতিল করো’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ এসব স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে শাহবাগ এলাকা।
বিক্ষোভ সমাবেশে শুক্র, শনি ও রবিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলকারীদের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘চার দফা দাবির ওপর শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ করা হবে। শনিবার বিকাল ৩টায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হবে এবং এদিন সমাবেশে রবিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রবিবার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হবে।’
কোটা পুনর্বহাল আদেশের রায় বাতিল না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এদিন প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)-এর শিক্ষার্থীরা।
পুরান ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় অবরোধ করলে সদরঘাট, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার, ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ী, নবাবপুর, বংশাল, গুলিস্তানসহ সব ধরনের রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। ময়মনসিংহে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন অবরোধ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)-এর শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
বরিশালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, জুলাই গণ অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি আজ ‘দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। বরিশাল বিভাগে গণসংযোগ করবে জুলাই গণ অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশ। গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা ছাত্র সংগঠন- বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের উদ্যোগে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে ‘সাহসী সাংবাদিক সমিতি : অভ্যুত্থানের দিনলিপি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।