রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্যানেল গোছাতে তৎপর ছাত্রশিবির, বাম জোটসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হওয়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচন নিয়ে তৎপর নয় ছাত্রদল। এর মধ্যে পোষ্য কোটার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বর্জন করেছেন দাপ্তরিক কার্যক্রম। এ দাবি অযৌক্তিক অ্যাখ্যা দিয়ে পাল্টা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে এমন ত্রিমুখী সংকটে নির্ধারিত সময়ে রাকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, কোটার ইস্যুটা সবাইকে নিয়েই সমাধান করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি রাকসু নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্ধারিত দিনেই নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। গত ২৮ জুলাই রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ অনুসারে আবাসিক হলগুলোতে বুথ রেখে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৬ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুসারে ২৫ হাজার ১২৭ জন ভোটার রয়েছে। এতে ছাত্র/ছাত্রীর অনুপাত ৬০/৪০ শতাংশ। নির্বাচন ঘিরে তৎপর হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। দুর্নীতির আশঙ্কায় হলের পরিবর্তে অ্যাকাডেমিক ভবনে বুথ স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট ও গণঅধিকার পরিষদ। ১৪ আগস্ট তিন দফা দাবিতে অনশনও করেছেন তারা। শুরু থেকেই হলগুলোতে শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ও একক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ছাত্রদল। কোনো পক্ষের অনুগত হয়ে নির্বাচন দিলে তা প্রতিহতের ঘোষণাও দেন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী। তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রত্যাশা করি। রাকসুকে কেন্দ্র করে কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের অন্যতম মুখপাত্র ফুয়াদ রাতুল বলেন, আশঙ্কার বিষয়গুলো প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু তাদের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। আমাদের সঙ্গে রবিবার বসতে চেয়েছেন কিন্তু সেটাও এখনো হয়নি। এমন আশঙ্কা থেকে গেলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ভাবতে হবে। জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, অনেকের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সঙ্গে কমিশন বসেছে। হলে নির্বাচনি বুথ থাকলে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন তারা। বুলিং নিয়ে কেউ হলে বা কমিশনে কোনো অভিযোগ দেয়নি। তাই বায়বীয় অভিযোগে কোনো নতুন সিদ্ধান্তের সুযোগ নেই। নির্ধারিত দিনে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। তার প্রত্যাশা, নির্বাচন সবার অংশগ্রহণমূলক হবে। এদিকে পোষ্য কোটা নিয়ে ফের মুখোমুখী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা অ্যাখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা ফিরে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। এ দাবিতে আজ চতুর্থ দিন সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। এ আন্দোলনে রাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এনামুল হক ও আবদুল হান্নানসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সক্রিয় অংশ নিতে দেখা নিয়েছেন। এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক অ্যাখ্যা দিয়ে আজ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত বিষয়। এটার কবর রচিত হয়েছে। পুনরায় এটা ফিরে আনার সুযোগ নেই। এ কোটা নিয়ে কোনো চক্রান্ত হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আসন্ন রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে এ বিষয়টি হঠাৎ আনা অবশ্যই ষড়যন্ত্রমূলক। এ প্রশাসন জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করেই চেয়ারে বসেছে। শরীরে একফোঁটা রক্ত থাকতে এ কোটা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ একক প্যানেল গঠনে কাজ করছে শিবির। আদিবাসী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে বৃহত্তর প্যানেলের দিকে হাঁটছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। পিছিয়ে নেই জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নেতারাও। সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব ও সালাউদ্দিন আম্মার স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের কথা বলছেন। আবাসিক হলগুলোতে স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের তৎপরতা বাড়ছে। তবে ত্রিমুখী সংকটে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।