গত কয়েক দিনের স্থবিরতার পর আবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করার পর স্বাভাবিক হয়ে এসেছে কার্যক্রম। গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজ নিজ দপ্তরে গিয়ে কাজে অংশ নেন। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউস, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ, আখাউড়াসহ দেশের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি রপ্তানি সংক্রান্ত শুল্কায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ভ্যাট কমিশনারেট ও আয়কর অফিসে বেড়েছে কর্মতৎপরতা। বাড়ছে সেবাপ্রত্যাশীদের আগমন। স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ী মহলে।
আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি করা হয়। গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) প্রাথমিক হিসাবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অর্থবছরের শেষ দিনের পরিসংখ্যান যোগ করলে রাজস্ব আদায় ৪ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হতে পারে বলে মনে করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারপরও বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়বে এবার রাজস্ব আদায়। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গতবারের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেশি হবে এটা নিশ্চিত। তবে একটু তো হোঁচট খেয়েছি। ব্যবসাবাণিজ্য বিঘ্নিত হয়েছে। যা কিছু হয়েছে সবকিছু ভুলে রাষ্ট্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমরা সবাই কাজ করব। যে কাজগুলো আছে সেগুলো এগিয়ে নিয়ে যাব। আশা করি আমাদের আর এ ধরনের বড় সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। অতীতে রেভিনিউ অফিসাররা যেভাবে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন, একইভাবে সামনেও তারা কাজ করবেন। তিনি বলেন, কাস্টমস হাউসগুলো আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে। তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। ফলে সবার মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। সকাল (গতকাল) থেকেই সব দপ্তরে কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ উপস্থিতি আছে। সব কাস্টম হাউস, আইসিডি, ভ্যাট ও কর অফিস সবাই কাজ করছে। অর্থবছরের শেষ দিন (গতকাল) হওয়ায় আমাদের একটা বড় ড্রাইভ থাকে। রেভিনিউগুলো যেগুলো পাইপলাইনে আছে সেগুলো ট্রেজারিতে নিয়ে আসার ক্রমাগত চেষ্টা থাকে।
বেনাপোল (যশোর) : আন্দোলন শেষে কাজে ফিরেছেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। সকাল থেকে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বেনাপোল কাস্টম ও বন্দর। দাপ্তরিক কাজে যোগ দিয়েছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গতকাল সকাল থেকেই শুরু হয়েছে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। আমদানি পণ্যচালান খালাস প্রক্রিয়া তদারকি করছেন কাস্টম কর্মকর্তারা। রাজস্ব আদায়ে চলছে শুল্কায়ন কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরও ফিরে পেয়েছে স্বাভাবিক গতি। বন্দর থেকে পণ্য খালাস চলছে। আগের নিয়মে শুরু হয়েছে বন্দরের কাজকর্ম।
মোংলা (বাগেরহাট) : কর্মবিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউনে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামা ও পরিবহনে কোনো প্রভাব পড়েনি। কার্যক্রম আগের মতোই স্বাভাবিক ছিল। ইপিজেডেও প্রভাব পড়েনি। প্রভাব পড়েনি মোংলা কাস্টম হাউসেও। মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক কালাম মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ২-১ দিনের বন্ধে ইপিজেডে তেমন ক্ষতি হয় না। এখানে প্রতিদিন কম করে হলেও ১ ঘণ্টা করে কাজ হয়েছে। সোমবার রাত থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এখন কাজকর্ম স্বাভাবিক। আর্থিকও ক্ষতি নেই।