বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ভূমিকা রাখার পরও মামলাবাণিজ্যের শিকার হয়ে আটকের পর প্রায় ১০ মাস ধরে কারাগারে আছেন দেশের শীর্ষ জুয়েলারি ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
দিলীপের মতো শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তাদের একের পর এক মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে হয়রানি করায় দেশের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাধিকবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান কম নয়। দেশের স্বর্ণ ব্যবসার নীতিমালা প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সব সময় দেশের সব দুর্যোগে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত তারা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বহুদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। টিউশন ফি রিবেট, বিজ্ঞান পরীক্ষাগার নির্মাণ, অসহায়দের গৃহ-নির্মাণ, মিড-ডে মিল, বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানের মতো বিস্তৃত সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। কভিড মহামারিতে রাজধানীসহ চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরে তিনি নিয়মিত আর্থিক সহায়তাসহ মাস্ক, পিপিই, স্যানিটাইজার বিতরণ করেন।
দিলীপ একা নন, তাঁর মতো সারা দেশের শত শত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তারে ধস নেমেছে ব্যবসাবাণিজ্যে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসেছেন। জানা গেছে, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর গুলশানের অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, দিলীপ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শুধু ব্যবসায়িক শত্রুতা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। ব্যবসায়িকভাবে তাঁকে নিঃস্ব করার উদ্দেশ্যেই সংশ্লিষ্ট মামলাবাজরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাদীর অজান্তেই দিলীপের নাম আসামির তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। কর্মীরা জানান, তিনি কোনোভাবেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন না। বরং তাঁর নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের খাবার, পানীয় ও ছাতা সরবরাহ করেছেন। এরপরও দিলীপের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে।
এরকম শত শত ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা এখন মিথ্যা অভিযোগের মামলায় জেল-জরিমানার মুখে। তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধুঁকছে। কর্মীরা চাকরি হারাচ্ছেন। শীর্ষ জুয়েলারি ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দীর্ঘ তিন বছরেরও অধিক সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তিনি দেশের পাশাপাশি বিদেশেও নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি জেলখানায় পুরোনো রোগের পাশাপাশি আরও একাধিক জটিল রোগে গুরুতর অসুস্থ দিলীপের চিকিৎসা গ্রহণও জরুরি হয়ে পড়েছে। বারবার তাঁর জামিনের আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া মিলছে না। এতে তাঁর পরিবার ও ব্যবসায়ী মহল উদ্বিগ্ন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তিনি পাঁচবার বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছেন, খুলনা বিভাগ থেকে সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন টানা ৯ বার। দিলীপের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীও নিয়মিত কর পরিশোধ করে দেশ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছেন। দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সরাসরি হস্তক্ষেপ ও তদারকি ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হলে আদালত তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনিজনিত রোগে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই কয়েক দিন পর তাঁকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়। ফলে বর্তমানে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন দিলীপ। শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় এবং দেশের শিল্প তথা ব্যবসাবাণিজ্যের স্বার্থে তাঁকে মিথ্যা অভিযোগের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে অবিলম্বে জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এবং তাঁর পরিবার।