বিশ্বে আম উৎপাদনে শীর্ষ দশে থাকলেও রপ্তানিতে তলানিতে বাংলাদেশের অবস্থান। দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যার কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি আমরা। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। এ লক্ষ্যে কাজ করছে কাতারে বাংলাদেশের দূতাবাস। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩২১ টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই আমের রপ্তানি কমছে। সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তাজা ফলের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৭৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমের আন্তর্জাতিক বাজার ২০২৪ সালে ছিল ৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার যা চলতি ২০২৫ সালে ৭১.৯৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। ২০২৯ সালে বাজারটি ৯৭ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। বিদেশে ফল রপ্তানির ক্ষেত্রে সনদায়ন ও জিআই স্বীকৃতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যেই আমের বেশ কয়েকটি প্রজাতি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, রাজশাহীর ফজলি, নওগাঁর নাক ফজলি ও রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির ক্ষেত্রে সঠিক মান বজায় রেখে রপ্তানি করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। এদিকে, সম্প্রতি আম রপ্তানি নিয়ে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও কাতারের রাষ্ট্রদূতের চেষ্টা দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। দেশ দুটিতে ৩ মিলিয়ন ডলারের আমের বাজার আছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাদের ভাষ্যমতে, রপ্তানির সনদ ও জিআই স্বীকৃতিসহ নানা জটিলতায় প্রতি বছর আম রপ্তানি কমছে। তবে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে সম্ভাবনাময় পরিস্থিতি রয়েছে। জানা গেছে, চীনা বায়াররা আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফায় বসেছেন এবং তারা কয়েক জাতের আম পছন্দ করেছেন। অন্যদিকে কাতারে বাংলাদেশি দূতাবাসের আয়োজনে আগামী ২৫ জুন থেকে সপ্তাহব্যাপী আম মেলা শুরু হবে। মেলা চলবে পয়লা জুলাই পর্যন্ত। মেলায় দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা স্বল্প খরচে অংশ নিতে পারবেন। এ বিষয়ে এম্পিরিক রিসার্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সোহেল রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমাদের মূল লক্ষ্য দেশের আম উৎপাদনকারীরা যেন কাতারের বাজার ধরতে পারেন। এজন্য রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতায় কাতারে আম মেলার আয়োজন হচ্ছে। মেলার মাধ্যমে কাতারের সঙ্গে কৃষি পণ্য রপ্তানির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে ২০ হাজার কোটি টাকার আমের বাজার গড়ে উঠেছে।
পর্যাপ্ত আমও উৎপাদন হচ্ছে। কিছু সমস্যার জন্য আমাদের আম রপ্তানি কম হয়েছে। চলতি বছর চীন ও কাতারের বাজারে বেশ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।