চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের লেখা বই ‘সি চিন পিং : দেশ প্রশাসন’ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রাজধানীতে এক প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাকার চীনা দূতাবাস ও চীনা ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ প্রেস।
‘সি চিন পিং : দেশ প্রশাসন’ বই বিষয়ক চীনা-বাংলাদেশি পাঠক সভা’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এতে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, চায়না ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট দু ঝানুওয়ান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের আধুনিকায়ন বাংলাদেশের এ ট্রানজিশন সময়ে অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীন অভিন্ন ভবিষ্যৎ গঠনে কাজ করতে চায়। তিনি বলেন, চীনের প্রতিবেশী কূটনীতি সৌহার্দ, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মার্চ মাসে চীন সফর করেন এবং রাষ্ট্রপতি সির সঙ্গে অনেক বিষয়ে একমত হন। উভয় পক্ষ রাজনৈতিক আস্থা আরও গভীর করার এবং রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সি চিন পিং : দেশ প্রশাসন’ বইটি ৪২ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলাদেশি পাঠকরা বইটি পড়লে চীন সম্পর্কে জানতে পারবে। বর্তমান বাস্তবতায় সমাজতন্ত্র বিষয়ে সির চিন্তা দর্শন তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে চায়না প্রশাসনের গাইডিং নীতিমালাও জানা যাবে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের বইয়ের বাংলা প্রকাশনা আমাদের জন্য একটি বড় উপহার। বইটি পড়লে সির রাজনৈতিক দর্শন ও চ্যালেঞ্জ জানা যাবে। এটা শুধু অ্যাকাডেমিক নয়, চীনের ফরেন পলিসিও তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। তিনি জানান, ঢাকায় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও ঢাকায় চীনা অপেরা প্রদর্শনীর জন্য একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চায়না ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট দু ঝানুওয়ান বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ, যারা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর সম্পর্ক। আমরা আশা করি আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে এ সম্পর্ক আরও বাড়বে।
আবদুল মঈন খান বলেন, চীনা-বাংলাদেশি পাঠক ফোরামের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা যখন সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছি, তখন চীনা প্রেসিডেন্টের এ বইটি আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, প্রতিবেশী দেশে কূটনীতি, দুর্নীতি প্রতিরোধ ইত্যাদি নিয়ে কথা বলছি। এ বইটিতে প্রেসিডেন্ট সি একই কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক হাজার বছর ধরে। চীন আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। সেসব শিক্ষা নিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, চীন বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি; বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বিশেষ করে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন সেতুতে চায়নার ইনভেস্টমেন্ট ও প্রযুক্তি সহায়তা দুই দেশের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করেছে। এ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে বাংলাদেশের জনগণ আশা করে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনায় অংশ নেন ডেইলি সানের সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, চায়না ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস গ্রুপের ডিরেক্টর জেনারেল লিউ সুয়াঙ্গান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজের ডিরেক্টর শামসাদ মর্তুজা।
এদিকে গতকাল জাতীয় লাইব্রেরিতে আনবেইলিং চিরমনি অব দ্য চায়না বুক কর্নার ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ‘রিডিং চায়না’ চায়না-বাংলাদেশ ইউথ এক্সচেঞ্জ উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আরও উপস্থিত ছিলেন সিআইসিজির প্রেসিডেন্ট ডু জাহনুয়ান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চায়না অ্যাম্বাসাডর ইয়াও ওয়েন। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান।