সিলেট বিভাগের প্রায় ১ কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অথচ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নজরদারির অভাব এবং রোগী ও তাদের স্বজনদের অসচেতনায় হাসপাতালটিতে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। সরেজমিন হাসপাতালের মেডিসিন (পুরুষ ও মহিলা) ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভিতরেই বাথরুমের অবস্থান। বাথরুমের কমোড বন্ধ হয়ে মেঝের মধ্যে পানি জমে ময়লা-আবর্জনা ভাসছে। বাথরুমের সবকটি পানির কল নষ্ট। বেসিনের ওপরও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বাথরুমের ঠিক বাইরে রাখা বড় ডাস্টবিন। ডাস্টবিন উপচেও পড়ছে ময়লা। পাশে হাসপাতালের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি বিছানা ও চাদর ফেলে রাখা। সেগুলোতেও লেপ্টে আছে ময়লা-আবর্জনা। বাথরুম, ডাস্টবিন আর বিছানাপত্র ঘিরে উড়ে বেড়াচ্ছে মাছি। ওয়ার্ডের চার কোনায় রোগীদের ফেলা থুথু, কফ ও পানের পিকে বিশ্রি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেও আসছে দুর্গন্ধ। ওয়ার্ডের প্রতিটি বিছানায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তেলাপোকা, ছারপোকা ও পিঁপড়া। রোগীদের জন্য সরবরাহকৃত খাবারেও বসছে মাছি। রোগীরাও খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে রেখেছেন ওয়ার্ডের ভিতর। এ চিত্র শুধু মেডিসিন ওয়ার্ডেরই নয়। হাসপাতালের সার্জারি, প্রসূতি, শিশু, অর্থোপেডিক্স ও সিসিইউসহ প্রায় সবকটি ওয়ার্ডেই একই অবস্থা। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফেরিওয়ালা। কেউ বিক্রি করছেন চা-বিস্কুট। আবার কেউ বিক্রি করছেন কাপড় ও প্লাস্টিকের ব্যাগ। ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাকেও অতিষ্ঠ রোগীরা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভিতরে-বাইরে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহৃত মেডিকেল ও সার্জিক্যাল বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালটির এমন দুরবস্থায় শঙ্কিত চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। মেডিসিন (পুরুষ) ওয়ার্ডে ভর্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, বুক জ্বালাপোড়া ও পেটব্যথা নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছেন। এক সপ্তাহ ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে এখন তার শরীরে চুলকানির সৃষ্টি হয়েছে। শরীরে ছোট ছোট লাল ফোসকা পড়েছে। হাসপাতালের এ নোংরা পরিবেশের কারণে পেটের চিকিৎসা করাতে এসে তাকে এখন চর্মরোগ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। আরেক রোগী জানান, ছারপোকা ও তেলাপোকার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। নজরুল ইসলাম নামে আরেক রোগী জানান, অ্যাপেন্টিসাইটিসের অপারেশন তিনি করিয়েছিলেন। হাসপাতালের নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে তার সেলাইয়ে ইনফেকশন হয়েছে। দ্বিতীয়বার অপারেশন করিয়েও তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। এদিকে, দালাল ও চোরচক্রের কাছে হাসপাতালের রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। রোগী ভর্তি হওয়ার পর দালালরা স্বজনদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ কেনার জন্য বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসিতে নিয়ে যায়।
সামগ্রিক অবস্থা প্রসঙ্গে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। অপরিচ্ছন্নতার জন্য আউটসোর্সিং কর্মীদেরও গাফিলতি রয়েছে। তাদের আমরা শাসাচ্ছি। রোগীর সুস্থতা ও চিকিৎসার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের সংখ্যা বেশি হলে ময়লা-আবর্জনা বেশি হয়। হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সপ্তাহে একদিন ক্রাস প্রোগ্রাম চালানো হচ্ছে।’