মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। এ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি ও প্রিয়জনের কাছে যেতে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরছে নগরবাসী। এবার ঈদের লম্বা ছুটি থাকায় ধাপে ধাপে রাজধানী ছেড়েছে মানুষ। মহাসড়কগুলোতে এবার তেমন যানজট দেখা যায়নি। বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ থাকলেও কোনো ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্য যাচ্ছে বাসগুলো। ট্রেন স্টেশনেও নেই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে আন্তনগর ট্রেনগুলো। লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে গেছে বেশির ভাগ লঞ্চ। রাজধানী ছাড়তে ঝক্কিঝামেলা না থাকায় এবারের ঈদের আনন্দে বাড়ি ফেরা মানুষের মুখে ছিল আনন্দের ছাপ।
সড়কপথে ঈদযাত্রা : গতকাল সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গাড়ির চাপ বেশি। কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের শুক্রবার ছুটি হলেও চাপ এড়িয়ে যাত্রা করতে চেয়েছেন। এ কারণে গতকাল সকাল সকাল বাড়ি ফিরছেন তারা। বাস কাউন্টারগুলোতে অপেক্ষমাণ যাত্রী দেখা গেলেও টিকিট কাটার কোনো চাপ দেখা যায়নি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনলাইনে টিকিট কেনার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বাস কাউন্টারগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই। তবে গার্মেন্টস ছুটি হলে আজ যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। শ্যামলী এনআর পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার কিশোর কুমার বলেন, এবার যাত্রীদের মধ্যে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে। ঈদে ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় যাত্রীরা ধাপে ধাপে বাড়ি ফিরছেন। বুধবার থেকেই লোকজন বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন। ফলে বাস টার্মিনালে প্রচণ্ড ভিড় হয়নি। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ বাড়লেও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। যানজট বিহীন বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি ঘরমুখো যাত্রীরা। বাস ভাড়া সরকার নির্ধারিত হারেই রাখা হয়েছে বলে পরিবহন কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ‘বকশিশ’ উল্লেখ করে কিছু লোকাল বাস কোম্পানি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫০-১০০ টাকা বেশি নিচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
ট্রেনেও স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা : ঘরমুখো মানুষকে প্রতি বছরই ট্রেনে ঈদযাত্রায় নানান বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তবে এবারের চিরচেনা সেই চিত্রে পরিবর্তন এসেছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ট্রেন ছাড়ছে, আর যাত্রীদের জন্য যাত্রা হয়েছে আগের চেয়ে স্বস্তিদায়ক। গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রেন ছাড়ার আগেই যাত্রীরা স্টেশনে এসে অপেক্ষা করছেন। তবে আগের মতো প্রচণ্ড ভিড় কিংবা বিশৃঙ্খলার দৃশ্য চোখে পড়েনি।
প্ল্যাটফর্মের বাইরের অংশে কিছুটা ভিড় থাকলেও ভিতরে শুধু টিকিটধারী যাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে, ফলে অবৈধভাবে কেউ স্টেশনে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। এতে স্টেশনের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক বেশি সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
অতীতে দেখা গেছে, ট্রেনের ছাদেও মানুষ উঠে যেত, যা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ। তবে এবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেই চিত্র পাল্টে দিয়েছে। প্ল্যাটফর্মের প্রবেশপথেই কঠোর নজরদারি থাকায় টিকিট ছাড়া কেউ স্টেশনে ঢুকতে পারছেন না। যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থায় মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হয়েছে, যাতে নির্ধারিত যাত্রী সংখ্যার চেয়ে কিছুটা বেশি মানুষ ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ পান। ফলে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকলেও ট্রেনের ছাদে ওঠার চিরচেনা বিশৃঙ্খল দৃশ্য এবার দেখা যাচ্ছে না। কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০টি আন্তনগর ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে এবং কোনো ট্রেনই বিলম্ব হয়নি। সকালের কিছু ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কিছুটা কমে এসেছে। অন্যদিকে সদরঘাট নৌ টার্মিনাল এলাকায় ভিড় করেছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। সদরঘাট টার্মিনাল ও পন্টুন এলাকায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে লঞ্চগুলোতে। এখন প্রতিদিন ডেক ও কেবিনে পরিপূর্ণ যাত্রী থাকায় সন্তুষ্ট লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দিনের শুরুতেই পন্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়িফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি। সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া ও পটুয়াখালীগামী পন্টুনে বেশ ভিড় দেখা যায়।
উত্তরের পথে নেই যানজট : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ বাড়লেও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। রাস্তায় ট্রাক, পিকআপ, মুরগির খাঁচার ওপর বসে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুদেরকেও ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যেতে দেখা গেছে। এদিকে মহাসড়কে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটার যানজট নিরসনে পুলিশের সাড়ে ৭০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
চাপ নেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে : মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার ভোর থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশপথ হিসেবে খ্যাত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দূরপাল্লার যানবাহনের চাপ বাড়ে। তবে গতকাল ভোর থেকে ওই মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমে এসেছে। যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়েও ছুটছে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ। আধুনিক এই মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট বা বিড়ম্বনা নেই বলে জানিয়েছেন ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা।
ভাঙ্গায় মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে ও টোলপ্লাজায় জট নেই : ভাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত ফরিদপুরের ভাঙ্গা। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সংযোগস্থল ভাঙ্গা। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভাঙ্গা। ভাঙ্গায় এবারের ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তির। যানজট নেই। গতকাল সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের বগাইল টোল প্লাজায়ও কোনো জট দেখা যায়নি। তবে গাড়ির চাপ অনেক বেশি ছিল।
গাজীপুর : ঈদযাত্রায় এবার নেই চিরচেনা যানজট। পরিবার, স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দলে দলে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীদের ঢল নামে। তবে বিভিন্ন স্থানে গাড়ির চাপ থাকলেও নেই দীর্ঘ যানজট। যানজট নিরসন ও ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।