চার দিনের সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এর আগে তিনি ফোনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে বিদায় নেন। গতকাল সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে জাতিসংঘ মহাসচিব হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগ ও রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে সব ধরনের সহযোগিতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে জাতিসংঘ সহযোগী হতে প্রস্তুত। আমি নিশ্চিত করতে চাই, শান্তি বজায় রাখতে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের এক নম্বর সহযোগী হিসেবে গণ্য করতে পারেন। বাংলাদেশকে একটি ন্যায্য ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আপনাদের ন্যায়সংগত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে সমর্থন জোগানো। জাতিসংঘ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে সমর্থন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফর ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ। সফরকালে মহাসচিব উপলব্ধি করেছেন যে, রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে কতটা মরিয়া। সংস্কার ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মনোভাব ইতিবাচক। সংস্কার বিষয়ে যে যে সহযোগিতা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সহায়তার জন্য এবং বাংলাদেশ ও তার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বার্তায় বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিবকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান ও রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। ঢাকা ছাড়ার আগে গুতেরেস ফোনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ি আলাপ করেন। চার দিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকা আসেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সফরের মূল লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ, বাংলাদেশে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং জাতিসংঘের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা। সফরকালে তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার শরণার্থীদের সঙ্গে ‘সলিডারিটি ইফতার’ করেন। পরদিন শনিবার তিনি ঢাকায় জাতিসংঘের নতুন ভবন উদ্বোধন এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আসেন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে। বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে। সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টা আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নিয়ে ঢাকার কর্মসূচি শেষ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।