কেবল ইট-পাথরের শহর থেকে নয়, গ্রামাঞ্চল থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। শুধু বইয়ের পাতায় টিকে আছে অনেক গাছ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। তাই শহরের অনেক সচেতন প্রকৃতিপ্রেমী ঘরের কোনে, ছাদে, বেলকনির ক্ষুদ্র পরিসরে সাধ্যমতো কিছু গাছ রাখার চেষ্টা করছেন। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা সেরে বাসায় ফিরে গাছের যত্নে মনোনিবেশ করছেন। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর চেষ্টা করছেন প্রাণ-প্রকৃতির। এ কারণেই ঢাকার রাস্তায় চলতে গেলে অনেক বাসার বেলকনিতে দিয়ে ঝুলে পড়তে দেখা যায় লতানো গাছ। কখনো বা গাছের ডাল বেরিয়ে আসে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। তাতে দেখা যায় নানান ফুল ও ফল। আবার অনেক বাড়িওয়ালা ছাদকে করে তুলেছেন একখণ্ড বাগান। নিরাপদ সবজি দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পারিবারিক বিনোদন এবং অবসর কাটানোর এক নৈসর্গিক স্থানে পরিণত হয়েছে ছাদবাগানগুলো।
সম্প্রতি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এক বাড়ির পাশ দিয়ে যেতেই পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে ভেসে আসে। চোখ আটকে যায় বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে প্রতিটা কোনে সাজানো নানান ধরনের গাছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শৌখিন এই বাগানের মালিক সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইফুল হক সাইফ। তিনি তার ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের বসত বিল্ডিংয়ের ছাদে ফুল-ফসলের এ আকর্ষণীয় বাগান গড়ে তুলেছেন। অনুমতি চাইতেই সানন্দে বাড়িটি ঘুরে দেখান তিনি।
সাইফুল হক বলেন, নিজের পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের মাঝেও বিষমুক্ত ফলমূল-শাক-সবজি বিতরণ করছেন। তার ছাদবাগানে রয়েছে মাল্টা, জাম্বুরা, দেশি ও থাই পেয়ারা, জাম, ডালিম, আনার, বিভিন্ন জাতের আম, লেবু, ড্রাগন ফল, আমলকি, জামরুল, পেঁপে, সফেদা, পুঁইশাক, লাউ, ঢ্যাঁড়স, মরিচ, পুদিনা, গোলাপ, গন্ধরাজ, বেলী, হাসনাহেনা, কাঠ গোলাপ, তিকোমা, জবা ও জুঁইসহ নানান ধরনের ফুল, ফল ও সবজি গাছ। বাড়ির আঙিনায় রয়েছে নিম, লিচু, নানান জাতের আম, নারকেল, কাঁঠাল প্রভৃতি ফল ও হরেক ফুলের গাছ। তার বাগানের ফুল-ফলের আকর্ষণে টিয়া, বুলবুলি, চঁড়ুই, শালিক ও ঘুঘুসহ নানান পাখি সারা দিন ভিড় করে। রাতেও অনেক পাখি এসব গাছে থাকে।
জানা গেছে, বিলেত থেকে বার এট ল’ ডিগ্রিধারী সৈয়দ সাইফুল হক বরিশালের (তৎকালীন বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি আসন) তিনবারের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ প্রয়াত সৈয়দ শহীদুল হক জামালের কনিষ্ঠ ছেলে। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সাইফুল হক সাইফ জানান, শৈশবকাল থেকেই তিনি কৃষি ও সবুজ প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রতি অনুরক্ত। এ কারণেই তিনি ইট-পাথরের নগরে সবুজ বাগান গড়ে তুলেছেন।