মরু অঞ্চলের ফল ‘সাম্মাম’ (রক মেলন)। সৌদি আরবে তরমুজ জাতীয় এ ফলের চাষ হয় ব্যাপক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সাম্মাম চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুরপহেলা গ্রামের কৃষক মো. মুস্তাকিম সরকার।
সাম্মাম সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের ফল। ইতোমধ্যে সাম্মাম এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাম্মামের বাইরের অংশ হলুদ আর ভিতরে লাল। এ ফলই খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। মুস্তাকিমের নতুন জাতের এ সাম্মাম ফলের চাষ দেখতে আশপাশ গ্রামের কৃষক ভিড় করছেন। কেউ কেউ সাম্মাম চাষের পরামর্শও নিচ্ছেন মুস্তাকিমের কাছ থেকে। সাম্মামের পাশাপাশি তিনি তরমুজও আবাদ করেছেন। কৃষক মো. মুস্তাকিম সরকার ধাতুরপহেলা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ করে তিনি সফলতা পান। এ মৌসুমে আবাদ করা জমিতে এ দুটি ফল চাষে ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে সাম্মাম ও তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল ও বিক্রিতে দর ভালো পাওয়া গেলে এ চাষে ৬ লাখ টাকার ওপর ফলন বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। সরেজমিন উপজেলার আদমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে ‘মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্প’। এ প্রকল্পে বছরজুড়ে নানান প্রকারের সবজি চাষের পাশাপাশি সাম্মাম ও তরমুজ চোখে পড়ছে। মাচায় ফুলে-ফলে সাম্মাম আর মাটিতে তরমুজ ভরপুর হয়ে উঠেছে। চলছে নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা। যেদিকে চোখ যাচ্ছে ওইসব ফল চোখে পড়ছে। গরু, ছাগল ও কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা পেতে বাগানের চারপাশে দেওয়া হয়েছে নেটের বেড়া।
কৃষক মুস্তাকিম সরকার বলেন, ‘মোগড়ার আদমপুর গ্রামে দেশি পদ্ধতিতে প্রায় ৯ বিঘা জমিতে মরুর ফল সাম্মাম ও তরমুজ চাষ করছি। এর মধ্যে প্রায় ১ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সাম্মাম ও ৮ বিঘা জমিতে দেশি পদ্ধতিতে তরমুজ রয়েছে। জমিতে সাম্মাম ও তরমুজ চাষে সেচ, বীজ বপন, চারা রোপণ, জমি ইজারা, সার, পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার ওপর। ইতোমধ্যে ফল বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারদর ভালো থাকলে এ দুটি বাগান থেকে ৬ লাখ টাকার ওপর ফল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে সাম্মাম ফলের তেমন কোনো রোগবালাই নেই, গাছে খুব সামান্য সার ও কীটনাশক দিতে হয়। আর সঠিক চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। একেকটি সাম্মাম ফলের ওজন এক থেকে দেড় কেজির ওপরে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সাম্মাম ও তরমুজ চাষ নিয়ে শুরুতে খুবই চিন্তিত ছিলাম। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি সম্মাম খুচরায় ১৬০-১৭০ আর তরমুজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘মুস্তাকিম একজন উদীয়মান কৃষক। তিনি সব সময় নতুন নতুন কৃষিপণ্য চাষে আগ্রহী। কৃষি অফিসের প্রযুক্তিগত সহায়তায় তরমুজের মতো অনেকটা সংকর জাতের ফল সাম্মাম চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো।’