একক পণ্য ও একক বাজার বা অঞ্চলনির্ভরতা দেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। হঠাৎ কোনো কারণে একক পণ্যের চাহিদা কমে গিয়ে রপ্তানিতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। আবার কোনো অঞ্চলে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক বা কূটনৈতিক কারণে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে রপ্তানি আয়ে বড় পতন হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি দুই মাস ধরে কমছে।
পোশাক রপ্তানি কমার কারণে বাংলাদেশের সার্বিক রপ্তানিও কমেছে। সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সার্বিক রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। ফলে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে একক পণ্যের ও একক বাজারের ওপর নির্ভর করা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বের হওয়ার জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বরাবরের মতোই রপ্তানি আয়ে শীর্ষে রয়েছে পোশাক খাত। তবে গত মাসে পোশাক খাতের রপ্তানি কমে গেছে। যা প্রভাব ফেলেছে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে। গত সেপ্টেম্বরে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ২৮৩ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ছিল ৩০১ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ডলার। রপ্তানি আয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কৃষি পণ্য এবং এ খাতেও রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা দেখা গেছে। সেপ্টেম্বর মাসে কৃষি পণ্য রপ্তানি বাবদ আয় হয়েছে ১০ কোটি ১৯ লাখ ডলার যা ২০২৪ সালে ছিল ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ রপ্তানি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা চামড়া ও চামড়া জাতীয় পণ্যে রপ্তানি বাবদ গত সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। অর্থাৎ এ খাতে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি আয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা পাট ও পাট জাতীয় পণ্য রপ্তানি বাবদ আয় এসেছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের ছিল ৭ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ কমেছে। পঞ্চম স্থানে রয়েছে গৃহস্থলি পণ্য খাত। এ খাতে গত সেপ্টেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি বাবদ আয় হয়েছে ৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অর্থাৎ এ খাতে রপ্তানি কমেছে শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘বাংলাদেশে রপ্তানি বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড়ের তুলনায় চার গুণ বেশি কেন্দ্রীভূত। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণ সংকটে ভুগছে। রপ্তানি পণ্যের চার-পঞ্চমাংশেরও বেশি যায় উত্তর আমেরিকা ও ইইউ বাজারে। দেশটির মোট রপ্তানির ৭২ শতাংশ যায় ১০ দেশে। এক্ষেত্রে ভারত ও শ্রীলঙ্কার হিসাব যথাক্রমে ৫২ শতাংশ ও ৬৪ শতাংশ।
বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বহুমুখীকরণের করণীয় প্রসঙ্গে এক্সক্লুসিভ ক্যান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির বলেন, ‘রপ্তানিতে বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য বিদেশে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আমাদের নীতি ঠিক করতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স হার কমাতে হবে। অন্যান্য দেশ কীভাবে রপ্তানি বাড়িয়েছে সে নীতি আমাদের অনুসরণ করতে হবে।’ আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ধাক্কার প্রভাবে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়েও প্রতিফলিত হয়েছে।’