জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার এবার সৌরবিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। এরই মধ্যে সৌরবিদ্যুতের প্রসার ঘটাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সোলার রুফটপ কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারি পতিত জমিতে হবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন। এর অংশ হিসেবে রেলের অব্যবহৃত জমি, মহাসড়কের পাশের জায়গা এবং চা বাগানেও সৌরবিদ্যুৎ উৎপানের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে সৌর প্রকল্প স্থাপনের জন্য বেশ কিছু স্থানের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে সৌর সিস্টেম স্থাপনের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সৌরবিদ্যুতের প্রসার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিন মাস ধরে তথ্য যাচাইবাছাই হয়েছে। এর ভিত্তিতে নয়টি সুপারিশ দেওয়া হয়। এগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট। স্ব স্ব মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে আলাদা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি অধিশাখার যুগ্মসচিব এ জে এম এরশাদ আহসান হাবিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আমরা ঋণ নেব। ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের চুক্তি হয়েছে। ছাদের পাশাপাশি সরকারি খাসজমি, অকৃষি জমি এবং কৃষিজমি নষ্ট না করে ফাঁকা খাসজমিতে গুরুত্ব দিয়ে সৌরবিদ্যুতের প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরি শেষে এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরুর দিকে। এরই মধ্যে চা বাগানের মালিকদের চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগেও চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। মহাসড়কের কোন কোন স্থানে এ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন হতে পারে তার একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে।’
রেলওয়ে মন্ত্রণালয় পরিত্যক্ত রেলস্টেশন ও খালি জায়গায় সৌরবিদুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে। এরই মধ্যে রেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কাজ শুরু করছে। এখন সৌর প্রকল্পে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য স্থান যাচাইবাছাইয়ের কাজ চলছে। তবে এ ক্ষেত্রে কাজের গতি বাড়াতে রেলের জমিতে যে সৌর প্রকল্প স্থাপন হবে তা বেসরকারি তত্ত্বাবধানে হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে কথা বলছেন। চা বাগানে রুফটপ সোলারের কোনো ব্যবস্থা নেই এজন্য চা মালিকদের বাগানের জমির ওপর এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। চা বাগানে ব্যবহৃত মোট বিদ্যুতের মধ্যে ন্যূনতম ১০ ভাগ সৌরবিদ্যুৎ থেকে ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কের পাশে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজ শুরু করেছে। আর সেতু কর্তৃপক্ষ তাদের যে সেতু আছে তার আউটলাইনে সৌর সিস্টেম স্থাপন করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এর টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন আছে। সৌরবিদ্যুৎ প্রসারে গ্রিন এনার্জি মার্কেট গঠনের লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য নীতিমালা প্রণয়ন করবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (স্রেডা)। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার জানান, ‘এগুলো বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। আমাদের টাস্কফোর্স এসব কাজের সঙ্গে জড়িত। রুফটপ, সৌরবিদ্যুতের কাজগুলো যাতে ঠিকভাবে হয় এজন্য আমরা নিয়মিত বৈঠক করি।’ জ্বালানি খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন খান গতকাল বলেন, ‘রেললাইন, নদীর তীর এবং মহাসড়কের পাশে সৌর সিস্টেমের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। রেলের অনেক জমি লিজ দেওয়া আছে। সেখানেও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।’