অ্যান্টার্কটিকার তীব্র শীতে বেঁচে থাকা সহজ নয়। তবু হাজার হাজার অ্যাডেলি পেঙ্গুইন প্রতিবছর একই স্থানে ফিরে আসে ডিম ফোটানোর জন্য। এ সময় তাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো পাথর দিয়ে বাসা বানানো।
পেঙ্গুইনের বাসা অন্য পাখির মতো ডালপালা বা ঘাস দিয়ে হয় না। বরফের দেশে সেসব উপকরণ পাওয়া যায় না। তাই তারা ছোট ছোট গোলাকার পাথর সংগ্রহ করে গাদা করে। এই পাথরের বাসা ডিমকে বরফের ঠান্ডা মাটি থেকে উঁচুতে রাখে। ফলে ডিম শুকনো ও উষ্ণ থাকে এবং বাচ্চার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। পাশাপাশি সুন্দরভাবে সাজানো বাসা স্ত্রী পেঙ্গুইনের কাছে পুরুষটির যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবেও ধরা হয়।
কিন্তু সমস্যা হলো ভালো মানের পাথর সব জায়গায় পাওয়া যায় না। তখনই শুরু হয় অন্যরকম খেলা। অনেক পুরুষ পেঙ্গুইন দূরে গিয়ে পাথর আনে, আবার কেউ কেউ বেছে নেয় সহজ উপায়, পাশের বাসা থেকে চুরি! সুযোগ পেলে তারা গোপনে পাশের বাসা থেকে ঠোঁটে একটা পাথর তুলে নিয়ে নিজের বাসায় বসিয়ে দেয়।
এই চুরির পেছনে আসলে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা আছে। প্রথমত, এতে শক্তি ও সময় বাঁচে। দ্বিতীয়ত, সীমিত সম্পদ ভাগাভাগি করতে গিয়ে চুরি এক ধরনের কৌশল হিসেবে কাজ করে। তবে ঝুঁকিও আছে, ধরা পড়লে লড়াই শুরু হয়, আর তাতে আঘাত বা শক্তির অপচয় হতে পারে।
গবেষকরা মনে করেন, পেঙ্গুইনের এই আচরণ শুধু টিকে থাকার উপায় নয়, বরং প্রজননের প্রতিযোগিতা। যে যত বড় ও সুন্দর বাসা তৈরি করবে, স্ত্রী পেঙ্গুইনের কাছে সেই পুরুষ তত আকর্ষণীয়। এভাবে প্রাকৃতিক ও যৌন নির্বাচন একসঙ্গে কাজ করে।
পেঙ্গুইনের পাথর সংগ্রহ আর চুরির এই খেলা আমাদের শেখায় যে প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণী বেঁচে থাকতে ও নতুন প্রজন্ম টিকিয়ে রাখতে নানা কৌশল ব্যবহার করে। দেখতে ছোট্ট হলেও, এসব আচরণের ভেতর লুকিয়ে আছে বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক প্রতিযোগিতা এবং বিবর্তনের গভীর ছাপ।
লেখক : পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়