নদনদী, খালবিল, জলাশয়ের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে কচুরিপানা। অন্যদিকে পরিবেশ ধ্বংস করছে পলিথিন। বিকল্প না আসায় অভিযানে নেমেও বাজার থেকে পলিথিন নির্মূল করতে পারছে না সরকার। এই সব সমস্যার সমাধানের পথ দেখাচ্ছেন একদল তরুণ গবেষক। তারা জলের আগাছা কচুরিপানা থেকে তৈরি করে ফেলেছেন পরিবেশবান্ধব পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগ। এই ব্যাগে মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবকিছু যেমন বহন করা যাবে, তেমনি বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী মোড়কজাতও করা যাবে। মাটিতে ফেলে দিলে ছয় মাসে পচে সারে পরিণত হবে। এতে দূষণের পরিবর্তে উর্বর হবে মাটি। নিয়ন্ত্রণ করা যাবে জলজ জীবনের হুমকি কচুরিপানা। তবে তহবিল সংকটে এখন পর্যন্ত তারা বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য গবেষণাটিকে পরবর্তী ধাপে নিতে পারেননি।
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নিয়াজ আল হাসান ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক উশামা শাফোয়াতের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি করেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ নিশান, কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী খাদেমুল সেকত ও অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বিপ্রদেব মজুমদার।
এমন পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনের জন্য গবেষক দলটি বিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন হাব প্রোগ্রামে (আইসিটি বিভাগ ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আয়োজিত) প্রথম স্থান অর্জন করে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার জিতে নেয়। তবে তহবিল সংকটে সেখানেই থমকে আছে উদ্ভাবনাটি। তরুণ গবেষক শেখ নিশান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের মাটি, পানি ধ্বংস করে দিচ্ছে পলিথিন। বিকল্প পণ্য এখনো বাজারে আসেনি। সাধারণ পাটের ব্যাগ বাজারে আছে, তবে পরিমাণে কম, দাম বেশি। এতে মাছের মতো ভেজাপণ্য বহন করা যায় না। এছাড়া পাট এক মৌসুমে পাওয়া যায়। শিমুল তুলা, ভুট্টা, কলাগাছের আঁশ থেকেও ব্যাগ করা যায়, তবে এগুলোর কাঁচামালের সংকট আছে।
কচুরিপানা এমনিতেই হয়, দ্রুত বাড়ে, নদনদী রক্ষা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য কচুরিপানা কমানো দরকার। সেখান থেকেই কচুরিপানা দিয়ে পলিথিন তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে গত বছর মে মাসে গবেষণা শুরু করি। পাঁচ মাসের মধ্যে কচুরিপানার সেলুলোজ ফাইবার থেকে পরিবেশবান্ধব পলিথিন উৎপাদনের ফর্মুলা উদ্ভাবনে সফল হই। সব মিলে এতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এটা পলিথিনের চাহিদা যেমন পূরণ করবে, আবার মাটিতে ফেললে সার হবে। কাঁচামাল সংগ্রহে তেমন খরচ না হওয়ায় এই ব্যাগের দাম অনেক কম হবে। এটাকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে নিতে পরীক্ষামূলক একটা কারখানা স্থাপন প্রয়োজন। এজন্য দরকার এক-দেড় কোটি টাকা। অনলাইনে কিছু স্টার্টআপে ফান্ডের জন্য আবেদন করেছি। এখনো পাইনি।
ড. নিয়াজ বলেন, তহবিলের অভাবে এটা এখনো গবেষণা পর্যায়ে আছে। উদ্ভাবনকে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে তহবিল দরকার। দুইটা স্থানে প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। এক জায়গায় দেড় কোটি, আরেকটিতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা তহবিলের আবেদন করেছি। বিষয়গুলো এখনো তাদের বিবেচনাধীন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দূষণের দায়ে সরকার যে জরিমানা আদায় করছে, সেই টাকা থেকে পরিবেশবান্ধব এসব গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ দিলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। প্লাস্টিক দূষণও কমবে, কচুরিপানাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।