জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেছেন, পৃথিবীতে দুই হাজারেরও বেশি প্রজাতির মাছি আছে। ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই তার মধ্যে একটি। অনেক দেশে এই মাছি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। এর লার্ভা থেকে প্রচুর আমিষসমৃদ্ধ উন্নতমানের মাছ ও পোলট্রি খাদ্য তৈরি হয়। একই সঙ্গে তৈরি হয় ভালো মানের জৈব সার। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই মাছি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে মাছিটি চাষ করছেন।
গবেষণা, সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে মাছিটির চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে কার্বনশূন্য প্রাকৃতিক কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বলেন, কোনো মাছিকেই পুরোপুরি উপকারী বলা যাবে না। কারণ মাছি ময়লা-আবর্জনায় বসে, জীবাণু বহন করে। তবে এই মাছি যেহেতু আবদ্ধ ঘরে চাষ হয় ও প্রাণিখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়, এটাকে ক্ষতিকর বলার সুযোগ নেই। বাজারে প্রচলিত প্রাণিখাদ্যের চেয়ে ব্লাক সোলজার ফ্লাই থেকে তৈরি খাদ্য অনেক উন্নতমানের ও আমিষসমৃদ্ধ। এ ছাড়া বাজারের অনেক পোলট্রি মাছের খাবারে ট্যানারি বর্জ্য মেশানো হয়। এতে সিসাসহ নানা ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকে। মাছির লার্ভায় এসব কেমিক্যাল থাকার সুযোগ নেই। তাই এই খাবার খাওয়ালে মাছ ও হাস-মুরগির বৃদ্ধি যেমন বেশি হবে, মাছ-মাংসের স্বাদও ভালো হবে। স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হবে না।
তিনি বলেন, শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, তা সামাল দিতে হিমশিম খায় সিটি করপোরেশন। পরিবেশ দূষণও হয়। বাণিজ্যিকভাবে ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ বাড়লে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। তখন বর্জ্য আর বোঝা হবে না, সম্পদে পরিণত হবে। কারণ, এই বর্জ্য খেয়ে মাছির লার্ভা উৎপন্ন হয়। লার্ভা হওয়ার পর বর্জ্যগুলো উন্নতমানের জৈব সারে পরিণত হয়। তবে প্লাস্টিকের কারণে ঢাকা শহরের বর্জ্য দিয়ে মাছি চাষ কঠিন- মন্তব্য করে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, উন্নত দেশগুলোতে বর্জ্য তিন ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়। একভাগে থাকে প্লাস্টিক ও পলিথিন, একভাগে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও অপরভাগে পচনশীল জৈব বর্জ্য। এখানে সব মিশিয়ে ফেলা হয়। জৈব বর্জ্য আলাদা করতে সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। সিটি করপোরেশন যদি ঘোষণা দেয় যে, আলাদা করে না ফেললে তারা বাসাবাড়ির বর্জ্য নেবে না, তখন এর একটা সুরাহা হতে পারে। তবে পলিথিন বা প্লাস্টিক বন্ধ করে দিতে পারলে সেটা হবে সব দিক দিয়ে মঙ্গল।