শিশুশিল্পী হিসেবেই বড় কিংবা ছোটপর্দায় অভিষেক ঘটে, জনপ্রিয়তার পথ ধরেই একসময় হয়ে যান নায়ক-নায়িকা। নায়ক-নায়িকা হয়েও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যান বা এখনো যাচ্ছেন এমন কয়েকজন তারকার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
শাবানা
আফরোজা সুলতানা রত্না। ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে অভিষেক। পরে ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু তাঁর। চিত্রপরিচালক এহতেশাম তাঁকে নায়িকা করে তাঁর নাম দেন শাবানা। ষাটের দশক থেকে নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এ অভিনেত্রী। তিনি ২৯৯টি ছবিতে অভিনয় করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে অভিনয়ের জন্য নয়বার ও প্রযোজক হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।
সুচরিতা
সুচরিতার প্রকৃত নাম ছিল বেবী হেলেন। ১৯৭০ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে মুস্তাফিজের ‘বাবলু’ তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি। ১৯৭২ সালে প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান তাঁকে তাঁর ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে ব্রেক দেন। তাঁর চমৎকার শারীরিক অবয়ব এবং ফটোজেনিক চেহারা তাঁকে নায়িকা হিসেবে শক্ত ভিত গড়ে দেয়। ২ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। বেশ কিছু বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন সুচরিতা।
ঈশিতা
রুমানা রশীদ ঈশিতা। অভিনেত্রী, পরিচালক এবং লেখক। তিনি ১৯৮৮ সালে জাতীয় মেধাবী প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’তে শিশুশিল্পী হিসেবে পুরস্কার অর্জন করে খ্যাতি পান। ইমদাদুল হক মিলনের রচনায় ও ফখরুল আবেদীনের পরিচালনায় ‘দুজনে’ ছিল তাঁর প্রথম অভিনীত নাটক। এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত অসংখ্য নাটকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেছেন।
সালমান শাহ
শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৮৬ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘পাথর সময়’ টিভি নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর আরও প্রায় আটটি নাটকে নায়ক চরিত্রে ও কিছু বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান তাঁর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রে নায়ক চরিত্রে সালমান শাহ নাম দিয়ে তাঁকে অভিনয় করান। জনপ্রিয় এই নায়ক সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং প্রায় সবকটিই ছিল ব্যবসাসফল। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর অকাল মৃত্যু ঘটে।
তিশা
নুসরাত ইমরোজ তিশা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এ অভিনেত্রীর শুরুটা বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতা দিয়ে। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। চার বন্ধু মিলে গঠন করেছিলেন গানের দল ‘অ্যাঞ্জেল ফোর’। শিশুশিল্পী হিসেবে ‘সাত প্রহরের কাব্য’ নাটকে অভিনয় করেন ১৯৯৮ সালে। তখন বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ২০০৩ সালে প্রচারিত আরসি কোলার বিজ্ঞাপন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ক্যারাম ১ম পত্র, ৬৯ নাটকগুলো দিয়ে আলোচনায় আসেন। অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করে একসময় নিজেকে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির ১ নম্বর নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীই তাঁকে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করান। ছবির নাম ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’। ‘হালদা’, ‘টেলিভিশন’, ‘অস্তিত্ব’, ‘ডুব’, ‘মেন্টাল’ সিনেমাগুলোতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। ২০১৬ সালে ‘অস্তিত্ব’ সিনেমার জন্য ‘সেরা অভিনেত্রী’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন।
পূজা চেরী
পূজা চেরী। ২০১১ সালে জাকির হোসেন রাজুর ‘মনের ঘরে বসত করে’ ছবিতে শাকিব খানের ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয়। শিশুশিল্পী হিসেবে প্রায় ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন। এ ছাড়া তাঁর আলোচিত বিজ্ঞাপন ‘হুইল পাওয়ার হোয়াইট’। নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় ২০১৮ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়ার যৌথ ছবি ‘নূর জাহান’ দিয়ে। এখনো জনপ্রিয়তার সঙ্গে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন পূজা চেরী।
দীঘি
প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। ২০০৬ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘কাবুলিওয়ালা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক তাঁর। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন দীঘি। প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন দীঘি। তার পর আরও দুটি চলচ্চিত্রে দক্ষ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন। প্রায় ১৪টি ছবিতে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের পর প্রায় আট বছর বিরতি দিয়ে ২০২১ সালে নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু তাঁর ‘তুমি আছ তুমি নেই’ ছবিতে তাঁকে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করেন। এরপর আরও অনেক ছবিতে অভিনয় করেন দীঘি।
তাসকিন
তাসকিন রহমান। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর ভিলেন হিসেবে পরিচিতি পেলেও তাঁর শুরুটা বিটিভি দিয়ে। ১৯৯০ সালে ‘শীতের পাখি’ নাটকে অভিনয় করেন। অনেক প্যাকেজ নাটকেও তাঁকে শিশুশিল্পী হিসেবে দেখা গেছে। ‘নতুন কুঁড়ি’র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী তিনি। শিশুশিল্পী হিসেবে দীলিপ সোমের ‘হৃদয় আমার’ ছবিতে অভিনয় করেন। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ অভিনয়ের আগে অভিনয় তানিম রহমান অংশুর ‘আদি’তে। নায়ক হিসেবে দেখা গেছে ‘বয়ফ্রেন্ড’ সিনেমায়। আরও মুক্তি পেয়েছে ‘যদি একদিন’ ও ‘সুলতান’সহ বেশ কটি সিনেমা।