দেশীয় শোবিজ অঙ্গনের একজন সব্যসাচী তারকা তৌকীর আহমেদ। ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যধারা সৃষ্টির জন্য যিনি সুপরিচিত। তাঁর অপর নাম যদি সাফল্য ধরা হয়, খুব একটা মিথ্যা বলা হবে না। অভিনেতা থেকে পরিচালক অথবা চিত্রনাট্যকার- সব ক্ষেত্রেই তাঁর সাফল্য আকাশচুম্বী। এই তারকার সঙ্গে কথোপকথন-
নিউইয়র্ক টু ঢাকা আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছেন। আর কত দিন রয়েছেন?
এসেছি অনেকদিন হলো। আরও আছি বেশ কিছুদিন। দেখা যাক।
একটি নাটকের শুটিং করছেন যেটি আপনার রচনায় ও নির্মাণে হচ্ছে...
হ্যাঁ। প্রায় পাঁচ বছর পর পরিচালনা করছি। এটি একটি ধারাবাহিক নাটক, নাম ‘ধূসর প্রজাপতি’। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য তৈরি ২৬ পর্বের একটি ধারাবাহিক।
অভিনয়ও তো করছেন?
হ্যাঁ। ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি তাও সম্ভবত ১০ বছর আগে হবে। আসলে গল্পের পাশাপাশি চরিত্রও সে রকম কিছু একটা পাওয়াটা দরকার। যেহেতু নিজের লেখা নাটক, তাই মনে হয়েছে এমন চরিত্রে অভিনয় করা যায়। তাই এটিতে কাজ করা।
শুটিং শেষ হবে কবে?
গতকাল শেষ হয়েছে। নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট ও আশপাশের লোকেশনে হয়েছে শুটিং।
আপনার জয়যাত্রা এখনো অব্যাহত...
আসলে সময়ের সঙ্গে মানুষের অভিজ্ঞতা বাড়ে, উপলব্ধি বাড়ে। একসময় কিছু করতে গিয়ে দেখেছি অনেক কম জানি। তখন শিখেছি। এখন এই সময়ে এসে বুঝেছি, কম জানা অপরাধ নয়; কম জানলেই বরং বেশি জানা যায়। সক্রেটিসের সেই কথাটাই বলতে চাই, ‘সবচেয়ে বড় জ্ঞান হচ্ছে নিজের অজ্ঞতাকে জানা। তো, আমরা তো দীর্ঘ সময় ধরে আছি। সুতরাং এটা এমন কিছু না, চলমান প্রক্রিয়া মাত্র।
আপনার প্রতিটি কাজই ভিন্নরকম...
আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষেরই প্রতিটি কাজই আলাদা হওয়া দরকার। কারণ প্রতিটি কাজের ভিতর দিয়ে শিল্পী কিছু নতুন করার চেষ্টা করেন। এবং সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, সব সময় তিনি সফল নাও হতে পারেন। তার এই অধিকারও থাকা উচিত, মাঝে মাঝে ওনারটা খারাপ হবে। কিন্তু চেষ্টাটা তো থাকবে যে আরেকটু ভালো করার। হয়তো কোনো দিন ভালো কিছু হবে, সে আশাতেই বুক বাঁধতে হবে।
শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতে বৈষম্য, প্রভাব, মেনুপুলেশন প্রসঙ্গে কী বলবেন?
বৈষম্য, প্রভাব, মেনুপুলেশন তো সব সেক্টরেই আছে। যার প্রভাব বেশি, সে বেশি প্রভাব খাটাবে আর যে দুর্বল তাকে সয়ে যেতে হবে সব। সিন্ডিকেশন তো সব মাধ্যমেই ভীষণ প্রকট। অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে গেলেই বিপদ। অনিয়ম, সিন্ডিকেশন, স্বজনপ্রীতি থাকে, আছে। তবে ব্যক্তি প্রভাবে বা সুবিধায় একটা বড় অংশ কাজের উৎসাহ হারায়। পুরস্কার, অনুদান, সিনেমার হল পাওয়া, ছবি মুক্তি-সবই তো এভাবেই হচ্ছে। আসলে প্রভাব প্রকট হলে মিডিয়ার স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিনেমার এখন ভালো সময়। নানারকম প্রতিকূলতা কাটিয়ে দর্শকের সামনে অনেক কষ্ট করে নিয়ে আসেন নির্মাতারা। এমনিতেই এখন ভালো জিনিস সমাদৃত হয় না। তাই আমাদের এই কষ্টকে মূল্যায়ন করতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে। দর্শকের দেখার তো সুযোগ দিতে হবে।
এখনকার ছবির প্রচারণা নিয়ে অভিমত কী?
ছবি প্রচারণায় অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভালোটাকে ভালো না বলে পেইড পাবলিসিটিতে ভালো বলার প্রচলন চালু হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুককেন্দ্রিক অনেক গ্রুপও রিভিউ দিচ্ছে খারাপটাকে ভালো বলে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরি। জহির রায়হান, আমজাদ হোসেন, তারেক মাসুদের ছবি ভালো বলেই টিকে আছে। বাণিজ্য দরকার, তবে গুণগত মান ঠিক রেখে।
তারকারা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয় সামনে নিয়ে আসেন। বিষয়টি কি শোভনীয়?
তারকাদের সর্বপ্রথম ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। সবার অনুকরণীয় হওয়া দরকার।
১০ জন যখন তাঁকে দেখবে, তাঁর কথা শুনবে, আচরণ দেখবে- যেন অনুকরণের মতো কিছু পায়। তারকাদেরও ব্যক্তিজীবনে অনেক টানাপোড়েন, সমস্যা থাকবেই। সেটা সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। আইডল বলেই তারকাদের সব বিষয় খেয়াল করেন ভক্তরা। তারকাদের জীবন কঠিন, সাধারণ মানুষের মতো নয়। রিস্ক যেমন বেশি তেমনি প্রাপ্তিও বেশি।
সেই রূপনগর, অয়োময়, সংশপ্তক বা কোথাও কেউ নেই’র মতো কাজ নির্মাণ সম্ভব?
মনে হয় সম্ভব নয়। জনরুচি বলে যে কথা আছে তার পরিবর্তন হয়েছে। সবাই এখন অস্থির। মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। কনটেন্টের দিক থেকে অনেকেই ভায়োলেন্স, থ্রিলার, নেতিবাচক গল্পে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ভালো নাটক কারা দেখবে? সবাই তো চ্যানেল, ইউটিউব আর ওটিটিতে থ্রিলার, ক্রাইম দেখতে পছন্দ করে। সেখানেই পুঁজি খাটাবে, যেখানে পাবলিসিটি বেশি।