মহানায়ক উত্তম কুমার, ষাটের দশকে তাঁর ক্যারিয়ার মধ্যাকাশের রবি হয়ে উজ্জ্বল ছড়াচ্ছে পৃথিবীর চারিধারে। সে সময় নানা গসিপ ম্যাগাজিন তাঁকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এমন এক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হঠাৎই মুম্বাই থেকে ফোন পেয়েছিলেন মহানায়ক। ফোন এসেছিল আশা পারেখের ম্যানেজারের কাছ থেকেই। এ ফোনের পরেই নাকি রাতারাতি কলকাতা ছেড়ে মুম্বাই (তখন বম্বে) রওনা দেন তিনি।
ম্যাগাজিনের খবর অনুযায়ী, বলিউডের এক শীর্ষ নায়িকার ডাকে কলকাতা ছেড়েছিলেন উত্তম। এরপরের ঘটনা মহানায়কের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাঁড়ায়। সুচিত্রা বা সুপ্রিয়া শুধু নন, উত্তমকে নাকি ভালো লাগত ছয়ের দশকের বলিউডের অন্যতম নায়িকা আশা পারেখেরও। আশা নাকি নানা ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বহুবার উত্তমের কথা বলেছেন। তবে আশা কখনো বাংলা ছবিতে অভিনয় করার কথা সেভাবে প্রকাশ করেননি। কিন্তু এই ষাটের দশকেই এমন এক ঘটনা ঘটে, যা সিনেপ্রেমীদের রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছিল। বলা ভালো, এক স্বপ্ন তৈরি হয়েও শেষমেশ সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।
আসলে সেই সময় আশা পারেখ ও উত্তম কুমারকে নিয়ে হিন্দি ছবি তৈরির প্ল্যান শুরু হয়েছিল। সেই প্ল্যান মতো, মুম্বাইয়ের নানা জায়গায় উত্তম-আশা পারেখ সিনেমার খাতিরেই ফটোশুট করেন। এমনকি, বেশ কিছু দৃশ্যের শুটিংও হয়। এটাই ছিল উত্তমের প্রথম হিন্দি ছবি। ছবির নাম ‘ঝংকার’। উত্তম-আশা পারেখ ছাড়াও এ ছবিতে ছিলেন রাজেন্দ্রনাথ, গিরিধারি, তব্বোসুমের মতো অভিনেতারা। কিন্তু হঠাৎই ছবিটা বন্ধ হয়ে যায়। শোনা যায়, প্রযোজকের সমস্যার কারণেই এ ছবি মাঝপথে থেমে যায়। উত্তম আর দেরি করেননি। ঝটপট মুম্বাই ছেড়ে ফের কলকাতায় চলে আসেন। শোনা যায়, এ ছবি বন্ধ হওয়ায় নাকি বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন আশা। কারণ, তিনি উত্তমের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন। সেই সময়ে গুঞ্জন ছিল উত্তম ও আশা পারেখের এই হিন্দি ছবিটি নাকি উত্তম-সুচিত্রার সুপারহিট বাংলা ছবি ইন্দ্রাণীর হিন্দি রিমেক। এ কারণেই সুচিত্রার মতো সাজিয়ে আশাকে নিয়ে ফটোশুট করেছিলেন উত্তম। আবার শোনা যায়, এ ছবিটি নাকি শাপমোচন ছবির হিন্দি রিমেক। তবে সে যাই হোক আশা পারেখের সঙ্গে জুটিতে এই ছবিই হতে পারত উত্তম কুমারের বলিউড ব্রেক। অন্তত, ফিল্ম সমালোচকরা মনে করেন, উত্তমের ‘ছোটি সি মুলাকত’ ছবির থেকে গুণমানে ‘ইন্দ্রাণী’ বা ‘শাপমোচন’ দুটোই অনেক এগিয়ে। তাই এই ছবির হিন্দি রিমেক হলে, বলিউডে মুখ থুবড়ে পড়তে হতো না উত্তমকে। ছোটি সি মুলাকাত ডাহা ফ্লপ হওয়ার কারণে বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন উত্তম। আশা পারেখের সঙ্গে এই ছবি আগে মুক্তি পেলে, হয়তো উত্তম বলিউডেও সুপারহিট হতেন। ফিল্মবোদ্ধাদের একাংশ মনে করেন, সেই সময় মুম্বাই ছেড়ে চলে আসা উত্তমের জীবনের একটা বড় ভুল। প্রযোজকের সমস্যা কাটিয়ে আশা পারেখের সঙ্গে জুটি বেঁধে ছবিটা করতেই পারতেন উত্তম। কেননা, সেই সময় আশা পারেখ ছিলেন বক্স অফিসের লক্ষ্মী।