আসুন আমরা সবাই অন্তত একটিবার পাঠ করি ‘আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।’
অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নহে। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও জমিনে যা কিছুই রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর কুরসি আসমানসমূহ ও জমিনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে, আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।’
উল্লিখিত আয়াতে কারিমা পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় সুরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াত। গুরুত্বপূর্ণ এই আয়াতে কারিমা যা আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব অপরিশীম। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ তিরমিজি শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে। কোরআনের চূড়া হলো সুরা বাকারা। এ সুরায় এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের অন্য আয়াতের নেতা সেটা হলো ‘আয়াতুল কুরসি।’ এজন্য আয়াতুল কুরসি কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) প্রিয় নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে?’ উত্তরে প্রিয় নবী (সা.) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসি। (নাসায়ি শরিফ)
আয়াতুল কুরসি পবিত্র কোরআন শরিফের শ্রেষ্ঠ আয়াত, যা সাহাবায়ে কেরামগণও জানতেন। এ প্রসঙ্গে উবাই বিন কাব (রা.) বলেন, রসুল (সা.) উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার দৃষ্টিতে কোরআন মাজিদের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল হাইয়্যুল কাইয়্যুম তথা আয়াতুল কুরসি। তারপর রসুল (সা.) নিজ হাত দিয়ে তাঁর বুকে মৃদু আঘাত করে বলেন, ‘আবুল মুনজির! এই জ্ঞানের কারণে তোমাকে মোবারকবাদ।’ (মুসলিম শরিফ)
দুনিয়ার এই জীবনে কমবেশি বিপদ-আপদ কিংবা অশান্তিতে থাকতে হয়। সব ধরনের বিপদ-আপদ এবং অশান্ত মন ও পারিবারিক বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আয়াতুল কুরসি পাঠের বিকল্প নেই। আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে পরিবারে শান্তি বিরাজ করে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এ আয়াতটি আয়াতুল কুরসি বিছানায় শোয়ার সময় পড়বে; আল্লাহ তার ঘরে বা সংসারে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরসংসারে শান্তি বজায় রাখবেন।’ (বাইহাকি শরিফ)
জান্নাতে যাওয়ার সহজ উপায় হলো আয়াতুল কুরসি পাঠ। পবিত্র এই আয়াত নিয়মিত পাঠ করলে মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ সহজ করে দেন। আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল (সা.) বলছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি শরিফ)
শয়তান থেকে রক্ষা পেতে আয়াতুল কুরসি পাঠ জরুরি। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, যে সকালে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান থেকে রক্ষা পাবে এবং যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। এমনকি পবিত্র আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে বাসা বাড়ি থেকেও শয়তান পালিয়ে যায়, যা হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, আয়াতুল কুরসি ঘুমাতে যাওয়ার আগে পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা সারা রাত একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রাখেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিছানায় যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসবে না।’ (বুখারি শরিফ)
জাদু, বদনজর ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করি। পরিবারসহ অন্যকে পাঠ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করি। নিজের জীবনকে কোরআনের রঙে রাঙিয়ে হৃদয়ে আলোকিত করি। হে আল্লাহ আপনি প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামিক গবেষক