মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় একই ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকা মামলায় গতকাল দুই সাক্ষীর জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৩ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্তের সময় জব্দ করা ১৯টি ভিডিও এআই জেনারেটেড (কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সৃষ্টি) কি না তা পরীক্ষা করেননি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলার পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনের জেরার প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা : মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে গতকাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। পরে ট্রাইব্যুনালের আদেশ তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করে ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা যে অভিযোগ দাখিল করেছেন, সেখানে আসামিদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছেন। হানিফ ছাড়া অন্য তিন আসামি হলেন- কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য ১৩ অক্টোবর : আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ গতকাল জব্দ তালিকার দুই সাক্ষী পুলিশের ইন্সপেক্টর রায়হানুল রাজ তুলাল ও এসআই রফিকুল ইসলামের জবানবন্দি ও জেরা সমাপ্ত হয়েছে। পরে এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৩ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জব্দ করা ১৯ ভিডিও এআই জেনারেটেড কি না পরীক্ষা করিনি : শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্তের সময় জব্দ করা ১৯টি ভিডিও এআই জেনারেটেড (কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সৃষ্টি) কি না তা পরীক্ষা করেননি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী ওই ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড বলে দাবি করলে, তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সত্য নয়। এসব ভিডিও এআই জেনারেটেড ছিল না।’ এর আগে প্রসিকিউশনের ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর জবানবন্দি শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিন জেরা শুরু করেন আইনজীবী আমির হোসেন। গতকালও জেরা সমাপ্ত না হওয়ায় আজ আবার দিন রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকালও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। জেরার সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান প্রমুখ।
গতকাল জেরার একপর্যায়ে আসামি পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাননি। বরং আমার মক্কেল শেখ হাসিনা ও কামালকে ফাঁসাতে আপনি ও তদন্ত সংস্থার অন্য সদস্যদের প্ররোচনায় তিনি এ কাজটি করেছিলেন।’ জবাবে এসব সত্য নয় বলে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, নিজের ইচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আমি বা তদন্ত সংস্থার অন্যান্য সদস্য কোনো ধরনের প্ররোচনা দেননি।