এক. বাংলাদেশে কোনো ইহুদি নাগরিক নেই। পাকিস্তান আমলে মাত্র একঘর ইহুদি ছিল রাজশাহীতে। স্বাধীনতার আগেই তারা চলে যায় কলকাতায়। আদমশুমারিতে নিজেকে কেউ ইহুদি বলে দাবি না করলেও এ দেশে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল কেউ নেই, তা হলফ করে বলা যাবে না। মোল্লাতন্ত্রের পতন হবে-এই আশায় তথাকথিত প্রগতিশীলদের কেউ কেউ ইরানে ইসরায়েল ও আমেরিকার হামলাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তারা নিজেদের খুশির কথাও জানাচ্ছেন ফেসবুকে। ইরান যখন অস্তিত্বসংকটে, সে নাজুক মুহূর্তে ‘শিয়ারা এমন এমন আকিদা পোষণ করেন যার ফলে তাদের আমরা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত মনে করতে পারি না’-তত্ত্ব হাজির করেছেন এ দেশেরই একজন সুপরিচিত আলেম। আরেকজনের তত্ত্ব-‘পারমাণবিক শক্তিধর ইরান মুসলিম বিশ্বের জন্য ইসরায়েলের মতোই বিপজ্জনক।’ ইরানে ইসরায়েলি হামলায় খুশি হওয়ার বিষয়েও তিনি জানান দিয়েছেন। ইরানের মানুষ শিয়া না সুন্নি, ধার্মিক না অধার্মিক তাদের নিজস্ব বিষয়। সেখানে রাজতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র না গণতন্ত্র থাকবে-তা নির্ধারণের মালিক সে দেশের জনগণ। কিন্তু গায়ের জোরে ইরানের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কেউ কেড়ে নেবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
দুনিয়ার যে কোনো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রকারান্তরে নিজেদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধার শামিল। ইরানের শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে যে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু কেউ নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার অভিলাসে কোনো দেশের ওপর চড়াও হবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
দুই. ইরানের প্রাচীন নাম পারস্য। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার দাবিদার তারা। অন্যদিকে ইহুদিরাও ইতিহাসের এক মহান জাতি। আল্লাহ এক এবং তাঁর কোনো শরিক নেই-মানব জাতিকে এ ধারণায় প্রথম উদ্বুদ্ধ করেছে তারা। ইতিহাস বলে পৃথিবীর প্রথম লিখিত আইন বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট বা তাওরাত কিতাব। যা মোশি বা মুসা (আ.)-এর ওপর মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়। জাতি হিসেবে ইহুদিরা উজ্জ্বল ঐতিহ্যের অধিকারী হলেও রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করে সেখানে ইউরোপ থেকে আসা ইহুদিদের নিয়ে যেভাবে রাষ্ট্র গড়া হয়েছে, তা যে কোনো বিচারে অবৈধ। ইহুদি যেমন একটি ধর্মের নাম, তেমন এটি একটি জাতিরও নাম। যে কারোর পক্ষে মুসলমান, খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিয়ে সে ধর্মের অংশীজন হওয়া সম্ভব। কিন্তু ইহুদি ধর্মে তেমন কোনো সুযোগ নেই। দুনিয়ার যে কোনো দেশ থেকে ইহুদিরা ইসরায়েলে এসে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রাখে। রাষ্ট্র তাদের নাগরিকত্ব দিতে আইনগতভাবেও বাধ্য। ইসরায়েলের নাগরিকত্ববিষয়ক বিধিবিধানের একটি হলো, ১৯৫০ সালের ‘প্রত্যাবর্তন আইন’। অন্যটি ১৯৫২ সালের ‘নাগরিকত্ব আইন’। প্রত্যাবর্তন আইনে দুনিয়ার যে কোনো ইহুদি ইসরায়েলে অভিবাসনের অধিকার রাখে। সে দেশে পা দিয়েই চাইলে নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবে তারা। রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিরা ছিল সংখ্যালঘিষ্ঠ। জাতিসংঘকে শিখণ্ডি হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর একাংশে ইসরায়েল অন্য অংশে ফিলিস্তিনি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাস করে জাতিসংঘ। জনসংখ্যায় কম হলেও ইহুদিদের জন্য ৫৫ শতাংশ ভূখণ্ড বরাদ্দ করা হয়। সংগত কারণেই সে বৈষম্যমূলক প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আরব দেশগুলো। জাতিসংঘের উদ্যোগে দুই রাষ্ট্রের প্রস্তাব বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তড়িঘড়ি ইহুদিরা ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যা আরব দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য করে তোলে। সে সংঘাতে অবশ্য জয়ী হয় ইসরায়েল এবং বিভিন্ন আরব দেশ থেকে ইহুদিরা চলে আসে সে দেশে।
তিন. মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইহুদির বাস ইরানে। দীর্ঘ ২ হাজার ৭০০ বছর ধরে তারা এই দেশটিতে বসবাস করে আসছে। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পরও ইরানে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে ইহুদিরা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ইরানে ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলার পরও সে দেশের ইহুদিরা প্রতিহিংসার শিকার হয়নি। ইরানে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার ইহুদি নাগরিক রয়েছে। তাদের বেশির ভাগের বসবাস তেহরান, ইসপাহান, সিরাজ, হামেদান ও তাবরিজের মতো বড় শহরে। ইরানের পার্লামেন্টে এই সম্প্রদায়ের জন্য একটি আসন সংরক্ষিত আছে। ইসরায়েলে জনসংখ্যার বিপরীতে ইহুদিদের যত সিনাগগ বা উপাসনালয় রয়েছে তার চেয়ে তুলনামূলক হিসাবে ইরানে অনেক বেশি। শুধু রাজধানী তেহরানেই রয়েছে অন্তত ৫০টি সিনাগগ। ইসপাহান নগরীতে একটি সিনাগগের অবস্থান আল-আকসা নামের একটি মসজিদের পাশে। ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি উদারনীতি গ্রহণ করা হয়েছে কৌশলগত কারণে। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে ইরানিদের সহাবস্থান বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য। ইরানে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের পরিচালিত হাসপাতালও রয়েছে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে যে কোনো ইরানি সেখানে চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকে।
ইরান আজ ইসরায়েলের ইহুদিবাদী শাসকদের জিঘাংসার শিকার। অথচ ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে ইরানে ইহুদিরা নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছে। সেই প্রাচীন যুগে পারস্য বা ইরানের মহান সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট ইহুদিদের মুক্তিদাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। আধুনিক যুগেও ধর্মীয় নিপীড়নের সময় বহু ইহুদি আশ্রয় পেয়েছে ইরানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে নাৎসিদের তাণ্ডবের মুখে বহু পোলিশ ইহুদি তেহরানে আশ্রয় পেয়েছে। তবে এ কথা ঠিক ১৬ থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত সাফাভি ও ১৯ শতকের কাজার শাসনামলে অন্যান্য সংখ্যালঘুর মতো ইহুদিরাও ধর্মান্তরিত হওয়ার চাপের মুখে ছিল। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে ইহুদিদের অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সাময়িকভাবে। নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অধিকার-সম্পর্কিত উদ্বেগে ইরানি ইহুদিদের একাংশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো দেশে স্থানান্তরিত হয়।
চার. ইরানে পতিতাবৃত্তি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবে মিসর, ইরাক এবং আরও কিছু আরব দেশের মতো ইরানে টাকা দিলেই নারী সঙ্গ পাওয়া যায়, মুতাহ বা সাময়িক বিয়ের বদৌলতে। মুতাহ বিয়েতে কোনো সাক্ষী লাগে না। ‘মিয়া বিবি রাজি তো কিয়া করেগা কাজি’ ধরনের বিয়ে এটি। এ বিয়ের মেয়াদ হতে পারে আধা বা এক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত।
একে অপরকে তালাক দিতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। আমাদের দেশে পতিতাবৃত্তিকে দেখা হয় ঘৃণার চোখে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পাপের কাজ বলে ভাবা হয়। অসামাজিক কাজ হিসেবে পতিতাবৃত্তি নিন্দিত হয় সমাজে। মুতাহ বিয়ের সঙ্গে পতিতাবৃত্তির কোনো পার্থক্য না থাকলেও ইরানে এটিকে ঘৃণার চোখে দেখা হয় না। এ আজব বিয়ের আড়ালে ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নারী এজেন্টরা মেলামেশার সুযোগ পেয়েছে প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে। মনের অজান্তেই নিজেদের পাশাপাশি তারা ইরানের জন্য ডেকে এনেছে সর্বনাশ।
ইরান-ইসরায়েল নিঃসন্দেহে এক অসম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে তেহরানকে ইসরায়েল শুধু নয়, বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি আমেরিকাকেও মোকাবিলা করতে হয়েছে। মোকাবিলা করতে হয়েছে ইসরায়েল ও আমেরিকার গোপন মিত্র আরব দেশগুলোর বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ ভূমিকার সঙ্গে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক শক্তিতে ইরান সমীহ অর্জনের মতো কৃতিত্ব দেখিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রক্সি যুদ্ধে মস্কোকে ড্রোনসহ অস্ত্রশস্ত্রের জন্য হাত পাততে হয়েছে ইরানের কাছে। আমেরিকার ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে তেহরান মস্কোর পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে। যে দেশ রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার যোগ্যতা রাখে, তাদের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ১৩ জুন ইরানের ওপর নিখুঁতভাবে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল যে ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে, তা আধুনিক দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। তারপরও পাল্টা হামলায় ৭৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসরায়েল বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে প্রতিপক্ষ কোনো দেশের কাছ থেকে। ইরানের সেনাবাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ জেনারেলদের নিখুঁতভাবে হত্যার কৃতিত্ব দেখিয়েছে ইসরায়েল তার বিশ্বসেরা গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে। এক ডজনের বেশি সেরা পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে একই কৌশলে। ইরানের শীর্ষ নেতাসহ কারোর পক্ষে নিজেকে নিরাপদ বলে মনে করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। দেশটির ভাগ্য ভালো শীর্ষ নেতা ও জেনারেলরা কেউ নিজেদের নিয়ে ভাবেননি। তাঁরা ভেবেছেন শত্রুকে কীভাবে ঘায়েল করা যায়। কীভাবে ইসরায়েল ও তার মুরুব্বি আমেরিকাকে দেওয়া যায় উচিত শিক্ষা। ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলার পর ইরান তেল আবিবসহ একের পর এক শত্রু স্থাপনায় যেভাবে পাল্টা হামলার সাহস দেখিয়েছে, তা একমাত্র ইরানিদেরই মানায়।
১৩ জুন ২০২৫ ইরানের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে কালো দিন হিসেবে। শুক্রবার মুসলমানদের জুমার দিন। সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এই দিনটিকে ইরানের জন্য কালো দিন বানানোর কৃতিত্ব ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের। বলা হচ্ছে, ইরানকে ঘায়েল করার যুদ্ধে মোসাদ পেয়েছে সে দেশের চাবাহার বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী ভারতীয় কোম্পানির সহায়তা। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মনিরকেও ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহারের কৃতিত্ব দেখিয়েছে সিআইএর এজেন্টরা। ইরানের সেনাপ্রধানকে যুদ্ধের কয়েক দিন আগে একটি ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিম মনির। যে ঘড়িতে ছিল এমন ডিভাইস, যা ইরানি সেনাপ্রধানের ওপর নজরদারিতে ব্যবহৃত হয়। নিখুঁতভাবে সেনাপ্রধানের বাসভবনে ঠিক যে বিছানায় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন, সেখানে হামলা চালানো সম্ভব হয়।
ইসরায়েলিরা টাকা দিয়ে ইরানি রাজনীতিক, সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের কিনতে না পারলেও নানা কৌশলে তাঁদের হত্যা করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্যাথরিন পেরেজ শকদাম নামের এক মোসাদ নারী এজেন্টের কৃতিত্ব আকাশছোঁয়া। তিনি ইমাম খামেনির আস্তানাতেও হাত বাড়াতে সক্ষম হন। ২০১৩ সালে শকদাম ঘোষণা করেন, পবিত্র ধর্ম ইসলামে তিনি আত্মিক মুক্তি ও মানবতার মহৎ দর্শন খুঁজে পেয়েছেন। তিনি শিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং আত্মিক শান্তি লাভের নামে ইরানে চলে যান। ইরানের মোল্লারা শকদামের ইসলাম গ্রহণ এবং ইসলামের পক্ষে বাতচিতকে বাহবা দিতে শুরু করেন।
অচিরেই তিনি ইরানের শাসক শিবিরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ইসলামি বিপ্লবের অন্যতম বড় প্রচারক হয়ে ওঠেন রাতারাতি। ইরানজুড়ে তখন শকদামের জয়জয়কার। একজন ইহুদি নারীর সধর্ম ত্যাগ করে শিয়া মুসলিম হয়ে যাওয়া এবং জোরালোভাবে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পক্ষে প্রচার করতে দেখে ইরানের সর্বমহলের লোকজন তাকে লুফে নেয়। এমনকি সে হাত বাড়াতে সক্ষম হয় ইরানের আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির দিকে। প্রচারমাধ্যমের জন্য খামেনির সাক্ষাৎকার নেওয়ারও সুযোগ পান শকদাম। একজন ইরানির জন্যও যা ছিল পরম সৌভাগ্যের বিষয়। খামেনির ওয়েবসাইটেও এই মোসাদ এজেন্টের লেখা প্রকাশিত হয়।
শকদাম এরপর শুরু করেন ইরানের সব প্রথম শ্রেণির ধর্মীয় নেতা আর সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেলামেশা। রেভল্যুশনারি গার্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দেখাসাক্ষাৎ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। শকদামের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাকে ইরানের ক্ষমতাধররা গর্বের বিষয় বলে ভাবতেন। ইরানের জেনারেল এবং ধর্মীয় নেতাদের ঘায়েল করতে এরপর শকদাম ইরানের ট্র্যাডিশনাল মুতাহ বিয়ের সুযোগ নেন। অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিছানায় যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। ইসলামের নিশানবরদার ভাব দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ইরান-সম্পর্কিত গোপন তথ্য আদায় করেন। তার নিজের ভাষায়, ‘I had to become one of them... I put on the veil, I used their customs, I played their game.’!
ইরানে মোসাদ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার প্রাপ্ত সব তথ্য চলে যেত মোসাদের হাতে। সে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইসরায়েল ইরানে নিখুঁতভাবে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের সুযোগ পেয়েছে। শকদাম একপর্যায়ে ইরানিদের সন্দেহের মধ্যে পড়েন। তার পরিচয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ইরান ছেড়ে তিনি পালিয়ে যান ফ্রান্সে।
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল : [email protected]