মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, খাদ্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করাও জরুরি। এটা করতে পারলে আমরা বাংলাদেশে শুধু খাদ্য সমস্যা নয়, স্বাস্থ্য সমস্যাকেও দূর করতে পারব।’
রবিবার (১০ আগস্ট) বরিশালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প এর উদ্যোগে ‘বিভাগীয় অগ্রগতি পর্যালোচনা কর্মশালা’-তে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বরিশাল নগরীর একটি আবাসিক হোটেল রুমে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় রোগ প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু হাসপাতাল বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। যদি আমরা খাদ্য নিরাপদ রাখতে না পারি। খাদ্য নিরাপদের ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের বড় ভূমিকা রয়েছে। নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে শুধু খাদ্য সমস্যা নয়, স্বাস্থ্য সমস্যাও সমাধান সম্ভব।’
দুধ উৎপাদন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে দুধ উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে এবং এখনো আমদানি করতে হয়। এলডিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বাড়ালে আমিষ ও প্রাণিজ খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হবে। প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে দুধের আমদানি বন্ধ করা সম্ভব হবে এবং এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
প্রাণিসম্পদ খাতে বরিশাল বিভাগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও বিশেষ করে মহিষ পালনের বড় সুযোগ রয়েছে। ভোলা জেলায় মহিষের বাথান দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। মহিষের দুধের দই ইতোমধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির জন্য মহিষের দুধ উৎপাদন ও লালন-পালন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পশু খাদ্য উৎপাদন খরচ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জানান, বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিদ্যুৎ বিল এখনো শিল্প খাতের হারে প্রদান করতে হচ্ছে। কৃষি খাতের হারে বিদ্যুৎ বিল প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
নারী খামারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পশু পালনে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আরও সমৃদ্ধ হতে হবে এবং প্রকল্পের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে যেমন তরুণরা দেশের চরিত্র বদলে দিয়েছে, তেমনি তারা অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. বেগম শামছুননাহার আহম্মদ, পরিচালক (উৎপাদন) ড. এ. বি. এম. খালেদুজ্জামান, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এ সময় এলডিডিপি প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রকল্পের প্রডিউসার গ্রুপ (পিজি) সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. জসিম উদ্দিন। বরিশাল বিভাগে এলডিডিপি’র কার্যক্রম, সাফল্য, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন চীফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী।
কর্মশালায় প্রকল্পের আওতায় চলমান কার্যক্রম, মাঠপর্যায়ের চ্যালেঞ্জ, দুগ্ধ ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের সুযোগ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ